ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব শুরু হয়েছে খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রায়। আজ রোববার দুপুরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে কয়েক ফুট। এতেই বাঁধের চূড়ার কাছাকাছি পানি উঠেছে। নদী উত্তাল আছে, মেঘলা আকাশের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় কয়রার মানুষেরা।
কয়রা উপজেলা পরিষদ থেকে এক কিলোমিটার দূরে মদিনাবাদ লঞ্চঘাট। কপোতাক্ষ নদের তীর সেটি। আজ বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা যায়। নদের পানি কতটুকু বাড়ছে, সেটি দেখতে এসেছেন তাঁরা। তখন বাঁধের প্রায় কিনারসমান পানি ছিল। দুপুরের জোয়ারেই ওই অবস্থা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ অতিক্রম করার সময় রাতের জোয়ারের পানি কেমন বাড়বে, সেটি নিয়েই চিন্তিত তাঁরা।
সেখানে বাঁধের ওপর ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। বাঁধের অবস্থা দেখতে এসেছিলেন তিনি। আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় যতবার ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, ততবারই ঝড়ে মানুষের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে ক্ষতি হয়েছে উঁচু জোয়ারে বাঁধ উপচে এলাকা তলিয়ে যাওয়ায়। আমাগের ভয় ঝড় নিয়ে না, উঁচু জোয়ারে বাঁধের কী হয় তা–ই নিয়ে।’
বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা আলমগীর হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘এখন তো ভাটা হওয়ার কথা। কিন্তু নদীর পানি মোটেও কমেনি। কী যে হবে রাতের জোয়ারে, আল্লাহই জানে। জোয়ারে যতটা পানি বাড়ছে ভাটায় সে পরিমাণ নামছে না। পরিস্থিতি সামলাতে আমাদের ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে বাঁধ পাহারা দিতি হবে।’
প্রশাসনের লোকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার তাগাদা দিচ্ছেন জানিয়ে নাসিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘কিন্তু সেখানে গিয়ে আমরা করব কী। আশ্রয়কেন্দ্রে তো সারা বছর থাকতি দেবে না। যদি বাঁধ ভাঙে, তখন উপায় কী হবে আমাগে। এবার বাঁধ ভাঙলি এলাকায় থাকা আমাগের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। তাই বাঁধের অবস্থা দেখতে চলে আইছি।’
কয়রা আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল আজ সন্ধ্যা বা মধ্যরাতে উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় আঘাত করতে পারে। ভোর থেকে কয়রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমকালে উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তবে জলোচ্ছ্বাস আজ রাতের জোয়ারে শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
কয়রা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কমলেশ কুমার বলেন, ‘ঝড়ের চেয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় বেড়িবাঁধ নিয়ে। আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ কোনো রকমে টিকে আছে। নদীর পানি বাড়লেই বিভিন্ন অংশে ভাঙন তৈরি হতে পারে।’
জোয়ারের পানি দুপুরের অবস্থার মতো থাকলে বাঁধের খুব বেশি সমস্যা হবে না জানিয়ে খুলনা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, যদি পানির উচ্চতা ৮ থেকে ১২ ফুট হয় ও বাতাসের তীব্রতা বাড়ে, তাহলে বাঁধ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।