নোয়াখালীতে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত মামুন হোসেনের মা ফাতেমা বেগম। আজ দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে
নোয়াখালীতে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত মামুন হোসেনের মা ফাতেমা বেগম। আজ দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে

ছেলে হারানোর কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন, কাঁদালেন তাঁরা

স্মরণসভায় ছেলে হারানোর কথা বলতে গিয়ে নিজেরা যেমন কেঁদেছেন, তেমনি কাঁদিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানুষদের। আজ বৃহস্পতিবার জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মৃতিতে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে স্বজনদের বক্তব্যে ওই আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে।

নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একডেমিতে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রাইভেট কারের চালক মামুন হোসেনের মা ফাতেমা বেগম। মামুন হোসেন ঢাকার মহাখালীতে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ছেলের স্মৃতি টেনে এনে ফাতেমা বেগম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সরকারি চাকরি করেন ঠিক আছে, কিন্তু আপনারা আমাদের মতো সাধারণ মায়েদের কথা খেয়াল রাখবেন। সরকারি চাকরি করেন বলে এভাবে মায়েদের বুক খালি করবেন না। ছোট ছোট শিশুদের তাঁদের বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করবেন না।’

ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। আমার ছেলে মসজিদ থেকে বের হয়েছে, এমন সময় একটা গুলিতে আমার ছেলের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। সবাই বলেছে আমাকে মামলা করতে। আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করব। আমি শুধু এইটাই জানি, পুলিশের গুলিতে আমার সন্তান মারা গেছে। আমি কীভাবে আমার সন্তান হারানোর ব্যথা ভুলব। তাঁর রেখে যাওয়া তিন বছরের ছেলেকে কীভাবে মানুষ করব? এভাবে কেন আমার ছেলেকে অকালে মরতে হলো?’ ফাতেমা বেগম যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন মিলনায়তনে উপস্থিত অনেকেই চোখ মুছছিলেন।

‘বুক ফেটে শুধু কান্না আসে’

ঢাকার বাড্ডায় একটি ভবনের তত্ত্বাবধায়কের চাকরি করে স্বল্প আয়ে সংসার চালান মোজাম্মেল হোসেন। তাঁর ছেলে মো. রায়হান ঢাকা কমার্স কলেজে পড়াশোনা করতেন। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ছয় বিষয় পরীক্ষা দেন রায়হান। পাসও করেছেন। ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বাড়ি নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১ নম্বর পূর্ব দুর্গানগর গ্রামে। তবে ঢাকায় মেসে থাকতেন ছেলে।

স্মরণসভায় মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছেলে বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছেলের খোঁজ পাইনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে লাশ খুঁজে পেয়েছি।’

ছেলেকে প্রতিদিন নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতেন মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজ চার মাস ধরে ভাত রান্না করলেও ছেলে আমার সামনে ভাত খেতে বসে না। খেতে বসলেই ছেলের কথা মনে পড়ে। ভাত খেতে পারি না। বুক ফেটে শুধু কান্না আসে। ছেলের আশা ছিল পুলিশের চাকরি করবে। সংসারের হাল ধরবে। আমার সব আশা শেষ হয়ে গেছে।’

স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার, জেলা পুলিশ সুপার আবদুল্লা আল ফারুক, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ইসহাক খন্দকার, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী খান, সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন, এ এস এম নাসিম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম, সমন্বয়ক বনি আমিন প্রমুখ।