নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যুবদলের এক নেতার কারখানায় তালা দিয়েছেন যুবলীগ নেতারা। এ সময় ওই কারখানায় কর্মরত দুই শ্রমিককে তুলে নিয়ে মারধরের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকার ‘আব্দুলাহ বরফ ঘর’ নামক একটি বরফ উৎপাদনকারী কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর হোসেন কারখানাটির মালিক। মারধরের শিকার দুই শ্রমিক হলেন কারখানা তদারকের দায়িত্বে থাকা সুমন মিয়া ও মো. রাজু।
মারধরের শিকার দুই শ্রমিক ও ঘটনার দুজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক কুরবান আলী ও যুগ্ম সম্পাদক মো. সোহেলের নেতৃত্বে সাতজনের একটি দল মোটরসাইকেলে করে বরফকলে আসে। তাঁরা ওমর হোসেনকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কারখানার দুই শ্রমিককে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যান। পরে দুই শ্রমিককে মারধর করে ১৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। টাকা নেওয়ার পর ওই দল আবার কারখানায় আসে। এ সময় তারা কারখানার একটি সিসি ক্যামেরা খুলে নেয়। পরে কারখানায় থাকা ১২ হাজার টাকা লুট করার পর কারখানাটিতে তালা লাগিয়ে দেয়।
কারখানায় থাকা অপর একটি সিসিটিভি ফুটেজে কুরবান আলী ও মো. সোহেলকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা অপর একজন ব্যক্তির মুখ হেলমেট দিয়ে ঢাকা থাকায় তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁরা কারখানার ভেতরে ঢুকে এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি করছেন। একপর্যায়ে তাঁরা কারখানার একজন শ্রমিককে ডেকে এনে ক্যাশবাক্সের পাশে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নেন। পরে তাঁরা দুই শ্রমিকসহ কারখানা থেকে বের হয়ে যান।
মারধরের শিকার এক শ্রমিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মোটরসাইকেলে করে তাঁদের বলাইখা এলাকার একটি তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। কক্ষে নিয়ে আগে থেকে সেখানে থাকা কাঠ ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ সময় কুরবান আলী ও সোহেল তাঁদের (শ্রমিকদের) কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে দুই শ্রমিক নিজেদের দারিদ্র্যের কথা জানিয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দুই যুবলীগ নেতার পায়ে ধরেন। মারধরের একপর্যায়ে একজন শ্রমিক ওই যুবলীগ নেতাদের এক অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে কারখানা এলাকায় আসেন। পরে তিনি ধার করে ১৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ পরিশোধ করেন। এ সময় ওই কারখানায় আর কাজ না করার শর্তে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই কারখানায় তালা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওমর হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এর আগে গত ৯ ও ১১ ডিসেম্বর দুই দফায় তাঁর মালিকানাধীন বরফকলসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে একই লোকজন হামলা ও লুটপাট চালায়। ওই ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হলে যুবলীগের লোকজন তাঁর বাড়িঘরে হামলা চালান। ওমর হোসেন বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর তাঁর দাদির মৃত্যু হলে যুবলীগের লোকজন জানাজার সময়ও সেখানে অবস্থান নেন। সে কারণে তিনি জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। পরে থানা থেকে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হন। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আজকের ঘটনায় কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন না বলে জানান ওমর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা কুরবান আলী বলেন, ‘কারখানায় তালা দেওয়া বা শ্রমিক তুলে এনে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ মিথ্যা। আমি লোকজনসহ বরফ কিনতে গিয়েছিলাম।’
কারখানায় তালা দেওয়া হামলা এবং দুই শ্রমিককে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, এমন কোনো ঘটনার বিষয়ে তাঁদের জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।