খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টারের পূর্ব পাশে বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে কয়েক শ চিংড়ির ঘের ও কাঁকড়া খামার পানিতে তলিয়ে গেছে।
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউপির পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের পার্থ মণ্ডল ও বাপী মণ্ডল বলেন, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে পূর্ব দুর্গাবাটি গ্রামে পাউবোর বেড়িবাঁধে ধস দেখা দেয়। এরপর রাত আটটার দিকে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন বাঁধটি রক্ষার জন্য কাজ শুরু করেন। তবে রাত ১০টার দিকে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের তোড়ে বাঁধটি ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পুড়াকাঠলা ও পশ্চিম পুড়াকাঠলা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দাতিনাখালী গ্রামেও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। মাদিয়া ও আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামও তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপির সাবেক সদস্য নীলকান্ত রপ্তান জানান, গতকাল সকালেও বাঁধটি ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ বিকেল থেকে বাঁধে ধস নামতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে স্থানীয় জেনারেটরের সাহায্য নিয়ে আলো জ্বালিয়ে বাঁধে মাটি ফেলতে শুরু করেন। তবে সব বৃথা করে দিয়ে রাত ১০টার দিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
স্থানীয় কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এই এলাকায় আঘাত করেছিল। স্থানীয় মানুষ এখনো সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ। মাস তিনেক আগে ধারদেনা করে এই এলাকার মানুষ নতুন করে ঘের প্রস্তুত করে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ শুরু করেছিলেন। কোনো কোনো ঘেরমালিক সবে চিংড়ি বিক্রি শুরু করেছেন। এর মধ্যে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অনেক চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দ্রুত বাঁধ মেরামত না করা হলে শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষের দুর্দশার শেষ থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
বুড়িগোলিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেড় শ মিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। এরই মধ্যে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আরও কয়েকটি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শতাধিক চিংড়ির ঘের পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর উপজেলার শাখা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, এরই মধ্যে তাঁরা বাঁধ মেরামতের সরঞ্জাম সংগ্রহ শুরু করেছেন। কাল শনিবার থেকে কাজ শুরু করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
দীর্ঘদিন আগে বাঁধের ওই অংশ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন দাবি করছেন। তবে কাজ শুরু না করায় বাঁধ ভেঙে গেছে বলে তাঁরা অভিযোগ করছেন। তবে এ বিষয়ে মাসুদ রানার দাবি, ওই স্থানে কাজ করার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না।