সুনামগঞ্জের চলতি নদীতে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধে বাল্কহেডসহ বালু ও পাথর পরিবহনের অন্য নৌযান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলার চলতি নদী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর সীমান্তে অবস্থিত খাসিয়া পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে সুরমা নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদীতে সরকার অনুমোদিত কোনো বালু বা পাথর মহাল নেই। ফলে সেখানে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয় না। তাই চলতি নদীতে বালু পরিবহনে বাল্কহেড বা বড় নৌযান চলাচল ফৌজদারি অপরাধের শামিল। এ এলাকায় কোনো শিল্পকারখানা ও কৃষি উৎপাদনের মতো বিষয় না থাকায় নদীতে ভারী নৌযান চলাচলের কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে এ নৌপথের শেষ গন্তব্য বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। তাই এলাকাটিতে শুধু বালু পরিবহনের জন্য বাল্কহেড ও অন্য বড় নৌযান চলাচল অবৈধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চলতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহন প্রতিরোধের লক্ষ্যে চলতি ও সুরমা নদীর মোহনা থেকে নদীটির প্রবেশ মুখ হয়ে উত্তর সীমান্তের খাসিয়া পাহাড় পর্যন্ত অংশে সব ধরনের বাল্কহেড নৌকাসহ বালু পরিবহনে ব্যবহৃত জলযান প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলার পরিবেশ সংগঠকদের সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে চলতি নদীতে ২০১৮ সাল থেকে ইজারা বন্ধ রাখা হয়েছে। ইজারা না হলেও বিভিন্ন সময়ে এ নদী থেকে ক্ষমতাসীনদের লোকজন স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে ‘ম্যানেজ করে’ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর নদীটি থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বেড়েছে। দিনে ও রাতে চলছে বালু-পাথর উত্তোলন। এতে করে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্সের অভিযান ও বালু জব্দ হলেও চলতি নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার টাস্কফোর্সের অভিযানে প্রায় ২ কোটি টাকার বালু বোঝাই ১৭টি বাল্কহেড ও নৌকা জব্দ কর হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস মিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, আমরা অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর। এখানে মন্ত্রিপরিষদের একটি প্রজ্ঞাপন অনুয়ায়ী বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ আছে। তবুও কিছু লোক বালু উত্তোলন ও পরিবহনের চেষ্টা করে। অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নদীতে নৌযান বন্ধের মাধ্যমে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণে আসবে।