জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক তরুণী (২০) কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। গতকাল রোববার জন্ম নেওয়া নবজাতক ও প্রসূতি বর্তমানে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত শুক্রবার স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে মেলান্দহ থানায় মামলা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান কোলে নিয়ে বসে আছেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওই তরুণী। তিনি অনেকটাই অসুস্থ। সন্তানের মাথায় বারবার হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। একাই সন্তানকে সামলাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর তরুণীর মা আসেন তাঁর কাছে।
তরুণীর মা বলেন, গত রোববার সকালে তাঁর মেয়ের প্রসববেদনা ওঠে। অনেক কিছুই বোঝে না মেয়েটি। কিন্তু প্রসবব্যথায় গোঙাচ্ছিল। দরিদ্র মানুষ কোথায় নিয়ে যাবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেলে কন্যাসন্তান প্রসব করে। সন্তান ভালো থাকলেও প্রসবের সময় বেশি রক্তক্ষরণের কারণে মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে রাতে রক্ত দেওয়া হয়েছে। এখন দুজনই সুস্থ আছেন। কিন্তু তিনি ভালো নেই। মেয়ে এবং শিশুটির কী হবে, দরিদ্র মানুষ হয়ে বিচার পাবেন কি না, এসব দুশ্চিন্তা ভর করেছে।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ফাকরিয়া আলম বলেন, রোববার দুপুরে প্রসববেদনা নিয়ে ওই নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। বিকেলে একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম হয়। নবজাতক সুস্থ আছে। তবে প্রসূতির শারীরিক অবস্থা দুর্বল। তাঁকে রক্ত ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ফাকরিয়া আলম বলেন, শিশুটি অনেক সুন্দর হয়েছে। প্রসূতি একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। কিন্তু সন্তানের প্রতি তাঁর অনেক ভালোবাসা। কারও কোলেই সন্তানকে দিতে চায় না। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা নবজাতক ও প্রসূতিকে যত্নসহকারে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এই তরুণীকে স্থানীয় এক যুবক ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। এ ঘটনায় গত শুক্রবার মেলান্দহ থাকায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়ি একই এলাকায়। পেশায় তিনি একজন ভটভটিচালক। তবে গ্রামে তাঁদের প্রভাব রয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার পর থেকে ওই পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মামলার এজাহার ও তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে ওই তরুণী বাড়ি থেকে বিভিন্ন স্থানে চলে যেতেন। ফলে পরিবারের লোকজন তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন। ওই যুবক শিকল থেকে তাঁকে খুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানাতে পারেননি তিনি। পাঁচ মাস পর তাঁর মা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে স্থানীয়ভাবে সালিস হয়। কিন্তু সেখানে যুবকের পরিবার বিষয়টি মেনে নেননি। বরং টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তবে তরুণীর পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি।
তরুণীর মা বলেন, ‘ওই যুবক সম্পর্কে আমার ভাতিজা। কিন্তু তাঁদের চেয়ে আমরা অনেক গরিব। বারবার তাঁদের কাছে গিয়েছি বিচারের জন্য। উল্টো তারাই আমাদের মামলা ও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিছেন। কিন্তু কোনো সঠিক সমাধান করেনি। তারা শুধু আমাদের টাকা দিতে চায়। টাকা দিয়ে কী করব, ওই বাচ্চা ও মায়ের কী হবে? তাঁরা বহুভাবে বাচ্চাটিকে নষ্ট করার জন্য চাপও দিয়েছিল। আমরা করি নাই এই পাপ কাজ। আমার চাওয়া, একটাই বাচ্চা এবং আমার মেয়ের দায়িত্ব তারা নিক।’
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ধর্ষণের শিকার হয়ে ওই নারী একটি কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন। এসব বিষয়ে তাঁর মা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে মাঠে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জামালপুর জেলা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, নবজাতকের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসামির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে শাস্তির পাশাপাশি মেয়ের পরিবারের সম্মতিক্রমে পিতৃপরিচয়ের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা পরিবারটির পাশে থাকবেন।