ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। রোববার দুপুরে অমর একুশে ভাস্কার্যের পাদদেশে
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মোস্তাফিজুর রহমান ও যৌন নিপীড়নের অন্য ঘটনায় অভিযুক্ত এক শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’। এ সময় আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় নিপীড়নে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সমাবেশও করেছে।

রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে অমর একুশে ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। অন্য ঘটনায় যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক।

সমাবেশে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিরাগত নিষিদ্ধ করতে পারলেও আশ্চর্যজনকভাবে ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষার্থীদের অপরাধ দমন করতে পারেনি। তাঁদের প্রভাব ঠেকাতে পারেনি। বরং প্রশাসন আমাদের চলমান আন্দোলনকে ক্রমাগত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই প্রশাসনকে ধিক্কার জানাচ্ছি।’

নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের দাবিগুলো হলো, ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তি ও তাঁদের সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং র‍্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা। নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা ওই শিক্ষকের বিচার নিষ্পত্তি করা ও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় নানা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা। সর্বশেষ মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রববানী বলেন, ‘সিন্ডিকেটের জরুরি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়া হবে। সেই সিন্ডিকেটকে অকার্যকর করা হয়ছে। উপাচার্য আগেও নির্বিকার ছিলেন, এখনো আছেন। হয়তো ভবিষ্যতেও নির্বিকার থাকার পাঁয়তারা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর সর্বোচ্চ বডি সিন্ডিকেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপাচার্য কীভাবে নির্বিকার বসে থাকতে পারেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। কারণ, জড়িত ব্যক্তিরা আগে থেকে জানত, এই ক্যাম্পাসে একজন নিপীড়ক শিক্ষক বহাল তবিয়তে রয়েছেন। প্রশাসন তাঁর সঙ্গে আছে। সুতরাং তাঁর ছোট ভাইয়েরা ধর্ষণের মতো অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। সুতরাং এদের মূলোৎপাটন করার জন্য আগে ওই নিপীড়ক শিক্ষককে বিতাড়িত করতে হবে।’

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, র‍্যাব বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধর্ষণের ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। তাঁরা সবাই এটা দল-মতনির্বিশেষে উপলব্ধি করছেন, কিন্তু উপাচার্য উপলব্ধি করতে পারছেন না যে এ ব্যর্থতা তাঁদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, মাদকের বিস্তার হয়েছে; এই দায় প্রশাসনের। প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষ তাঁদের দায়িত্ব পালন করেননি। তাঁদের যদি ব্যক্তিগত লজ্জাবোধ থাকত, তাহলে পদত্যাগ করতেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ পরিবেশ নেই। এ পরিবেশ আগে নিশ্চিত করতে হবে।