প্রশ্নপত্র ফাঁস

বাবা ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি, দুই ছেলে বাড়িতে আসতেন প্রাইভেট কারে

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের ২ জন ব্যবসায়ী সহোদর মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩৪) ও সাইম হোসেন (২০)। তাঁরা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামের মো. সাহেদ আলীর ছেলে।

আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে ইচাইল গ্রামের কব্বা মার্কেট এলাকার শফিকুল ইসলামের চা–দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন অন্তত ১৪ জন। সাখাওয়াত ও সাইম হোসেনের বাড়ি চিনতে চাইলে তাঁরা দেখিয়ে দেন। সেখানে থাকা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মা মারা যাওয়ার পর মামারা দুই ভাইকে ঢাকায় নিয়ে যান। এলাকায় এলেও তাঁরা দোকানে এসে চা পান করে চলে যেতেন। বাড়িতে নতুন ঘর না তুললেও গত দুই বছর সাদা রঙের প্রাইভেট কারে করে বাড়িতে আসতেন দুই ভাই।

সাখাওয়াত ও সাইমের বাবার ভিটাতে একটি পুরোনো আধাপাকা ঘর আছে। সেটির বারান্দার প্লাস্টার সম্পন্ন হয়নি।

সাখাওয়াতের ফুফাতো বোন আছিয়া বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেন, সাখাওয়াত ও সাইমের মা কিশোয়ারা বেগম ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১২ বছর আগে মারা যান। দুই ভাই ও দুই বোন তাঁরা। তাঁদের বোন সানজিদা আক্তার ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট বোন সুমাইয়া আক্তার ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়ছেন।

সাখাওয়াতের ফুফু জমেলা খাতুনও একই বাড়িতে থাকেন। আজ সকালে বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, বন্ধু–বান্ধবের পাল্লায় পড়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর দুই ভাতিজা। দুই ভাই আগে গ্রামে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অ্যাসিড–পানির ব্যবসা করতেন। পরে বাড়িতে জমি বিক্রি করে ঢাকায় নিয়ে দুই ভাই ব্যবসা করতেন।

সাখাওয়াত ও সাইমের মামাতো ভাই মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাখাওয়াত ঢাকার রাজারবাগ এলাকায় থেকে ব্যবসা করতেন। পরে সাইমও একই কাজে যুক্ত হন। দুই বছর ধরে এলাকায় প্রাইভেট কারে আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, কিস্তিতে গাড়িটি কিনেছেন।

এলাকার লোকজনের ভাষ্য, সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেনের বাবা সাহেদ আলী অন্তত ৪০ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। ময়মনসিংহ নগরের দিঘারকান্দা বাইপাস এলাকার কাদুরবাড়ি মোড়ে ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে কাজ করেন তিনি। থাকেন নগরের আকুয়া বাইপাস এলাকায় ভাগনি কমলা খাতুনের বাসায়।

মুঠোফোনে সাহেদ আলী বলেন, ‘আমার ছেলেরা ব্যবসা করেই সময় পায় না, অন্য কিছু করার সুযোগ নাই। ব্যবসার সুবিধার জন্য ২ বছর আগে ১১ লাখ টাকা দিয়ে একটি প্রাইভেট কার কিনেছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিল। বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে টাকা নিয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে।’ ছেলেদের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করবে—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামের স্থানীয় যুবক নিশাত হাসান বলেন, ‘হঠাৎ প্রাইভেট কার নিয়ে দুই ভাই এলাকায় আসতেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন না। গ্রেপ্তারের পর সব কিছু জেনে অবাক লেগেছে।’ সর্বশেষ গত রোজার ঈদে দুই ভাই বাড়ি এসেছিলেন বলে তিনি জানান।