গত ৫ আগস্টের পর থেকে ভেনাসহীন অবস্থায় আছে ময়মনসিংহের শশীলজ জাদুঘরটি
গত ৫ আগস্টের পর থেকে ভেনাসহীন অবস্থায় আছে ময়মনসিংহের শশীলজ জাদুঘরটি

ভেনাসহীন শশীলজ এখন যেমন

ময়মনসিংহ শহরের শশীলজ জাদুঘরের মূল আকর্ষণ ছিল শ্বেতপাথরের তৈরি গ্রিক দেবী ভেনাসের মূর্তি। শতবর্ষ প্রাচীন প্রাসাদের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই নজর কাড়ত ফোয়ারার মাঝখানে থাকা ভেনাস। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ভেনাসহীন অবস্থায় আছে জাদুঘরটি। দর্শনার্থীরা জাদুঘরে এসে ভাস্কর্যটি দেখতে না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন, আফসোস করছেন।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাদুঘরে গিয়ে দর্শনার্থীদের আনাগোনা দেখা যায়। অনেকে প্রসাদের বিভিন্ন অংশে ছবি তুলছেন, ঘুরছেন। কথা হয় সাবিহা জাহান নামের এক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই ঘুরতে শশীলজে আসতাম। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আজই প্রথম এসেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেনাস ভাঙা হয়েছে দেখে খুব কষ্ট লেগেছিল। আজ নিজে এসে দেখলাম, ভেনাস নেই।’ আরেক দর্শনার্থী আরমান হোসেন বলেন, শতবর্ষ প্রাচীন প্রাসাদের ভেনাস মূর্তিটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ছিল। এটি ভেঙে ফেলা উচিত কাজ হয়নি।

ভেনাসের মূর্তিটি ভাঙার পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা স্থানীয় অংশীজনদের নিয়ে একটি সভা করেন। সেই সভায় অনেকে মত দেন শ্বেতপাথরের ভাঙা মূর্তিটি জাদুঘরের গ্যালারিতে রাখার জন্য। আগের জায়গায় ভাস্কর্যটির একটি রেপ্লিকা প্রতিস্থাপন করার পরামর্শও এসেছে। এ বিষয়ে জাদুঘরের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ময়মনসিংহ শহরের শশীলজ জাদুঘরের মূল আকর্ষণ ছিল শ্বেতপাথরের তৈরি গ্রিক দেবী ভেনাসের মূর্তি

ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্প পর্ষদের সভাপতি মো. রাজন বলেন, কারা ভাস্কর্য ভেঙেছে, সেটি প্রমাণিত। ভিডিওতে সবার মুখ দেখা যাচ্ছে। তাঁদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জাদুঘরের মূল আকর্ষণ ছিল শ্বেতপাথরের ভেনাস মূর্তিটি। অমূল্য এই জাতীয় সম্পদ রক্ষায় আগে থেকেই নিরাপত্তা চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ভেনাস মূর্তির নিরাপত্তার জন্য ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল এবং ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়। ভেনাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হলে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল।

জাদুঘরের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভেনাসের মূর্তিটি ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের ঘটনার পরের দিন ৬ আগস্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে তিনি লোক পাঠান। তবে কোতোয়ালি মডেল থানা ১৪ আগস্ট জিডিটি নেয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি বলে তিনি জানান।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভেনাসের মূর্তিটি ভাঙচুর করে

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন দেবনাথ বলেন, ‘এলাকাটি আমার বিট হওয়ায় একদিন ভেতরে গিয়ে দেখে এসেছি। কিন্তু ওই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা হয়নি। জিডি তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। থানায় নতুন যোগদান করা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

শশীলজ হলো ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি। এটি ‘ময়মনসিংহ রাজবাড়ি’ নামে পরিচিত। ১৯০৫ সালে শশীলজ নির্মিত হয়। ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশীলজটি অধিগ্রহণ করার পর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।