বিভিন্ন জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার দাবিতে আজ শনিবার গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের সেন্টু মার্কেটের সামনে আজ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল চারটায় শহরের হুজরাপুর মহল্লা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এসে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে পাঁচ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বেড়েছে। পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে, আমাদের নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এমনকি কালীপূজার রাতেও আমাদের ধরে থানাতে আটকে রাখা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এ দেশে আমাদের থাকার অধিকার থাকবে না। কিন্তু আমরা এ দেশেই জন্ম নিয়েছি। দেশের স্বাধীনতায় আমরাও অংশ নিয়েছি। আমরা এ স্বাধীন দেশেই থাকতে চাই। দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি।’
সমাবেশে বক্তব্য দেন উত্তরবঙ্গ বৈষ্ণব সংঘের সভাপতি শ্যাম কিশোর দাস গোস্বামী, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি ডাবলু কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি, সংগঠনের নেতা কৌশিক দাস, পলাশ দাস প্রমুখ।
সিরাজগঞ্জে রেলস্টেশন বাজারের পৌর মুক্তমঞ্চে বিকেলে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চন্দন পালের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র ভৌমিক, সাংগঠনিক সম্পাদক পরেশ মাহাতো, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রতন বাঁশফোড়, সিরাজগঞ্জ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সদস্য কল্যাণ কুমার সাহা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘আমরা এই দেশের ভূমিপুত্র, এখানে আমাদের জন্ম। তাহলে আমাদের ওপর এত অন্যায় কেন?’ তাঁরা আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ৮ দফা দাবি মেনে নিতে হবে এবং সংগঠনের নেতা রানা দাশগুপ্ত ও চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে করা “মিথ্যা” মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। দাবি না মানা হলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনের পথে যাব।’
ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে বিকেলে আয়োজিত মানববন্ধনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও স্থানীয় সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অলোক সেন। বক্তব্য দেন জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি তুষার কুমার দত্ত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য প্রভাত কুমার সিংহ প্রমুখ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, যাঁরা সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলেন, তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হয়। বক্তারা সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। তবে অশান্তি সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই রুখে দাঁড়াব।’
বক্তারা বলেন, ‘ফরিদপুরে ও পূজা উদ্যাপন পরিষদের একাধিক নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। দেশটা হিন্দুশূন্য করার চেষ্টা করা হলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন।’
বক্তারা বলেন, রানা দাশগুপ্ত ও চট্টগ্রাম জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় প্রভুকে ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায় বিকেলে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার কুমিল্লা নগর ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার নেতা-কর্মীরা। এ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ৮ দফা দাবি না মানলে সারা দেশের সনাতনীরা ঢাকায় অবরোধ করবেন।
গণসমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি চন্দন রায়, সাধারণ সম্পাদক তাপস বকশি, মহানগর আহ্বায়ক খোকন সাহা, পূজা উদ্যাপন পরিষদ জেলা সভাপতি নির্মল পাল, সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সরকার, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাশ প্রমুখ।
বক্তব্যে তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে আমাদের অংশগ্রহণ কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু আমরাই বেশি নির্যাতিত হচ্ছি। ’৪৭-এর পর থেকে আমরা অত্যাচারিত হচ্ছি। সরকারের পরিবর্তন হলেও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন কমছে না। সরকার আসে সরকার যায়; কিন্তু আমাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ হয় না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি চন্দন রায়, সাধারণ সম্পাদক তাপস বকশি, মহানগর আহ্বায়ক খোকন সাহা, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাশ প্রমুখ।
পটুয়াখালী প্রেসক্লাব চত্বরে বিকেলে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি অতুল চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার দাস, সিনিয়র সহসভাপতি তপন কুমার কর্মকার, সহসভাপতি সমীর কর্মকার, কোষাধ্যক্ষ দিলীপ কুমার দাস এবং সদর থানার সভাপতি স্বপন চক্রবর্তী, সাংবাদিক কাজল বরণ দাস, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় খাসকেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে রানা দাশগুপ্তসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঐক্য পরিষদের নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন অব্যাহত থাকবে। রাষ্ট্রের উচিত সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
[প্রতিবেদনটি তৈরি তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর; প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী ও সংবাদদাতা, কুমিল্লা]