ঠাকুরগাঁও-৩ (রানীশংকৈল-পীরগঞ্জ) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলীর প্রচারণায় নেই শরিক দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ইয়াসিন আলী বলছেন, ১৪ দলের প্রার্থী হলেও তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাচ্ছেন না। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ইয়াসিন আলী তাঁদের ডাকছেন না। ডাকলেই তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
বিএনপির সংসদ সদস্যের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসনটি ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী। তিনি এবার হাতুড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাফি আল আসাদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির সিরাজুল ইসলাম ও জাকের পার্টির এমদাদুল হক।
আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। কীভাবে কাজটি হবে, সেটা তো প্রার্থীকে পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা তো তাঁকে সহযোগিতা করতে চাচ্ছি।মু. সাদেক কুরাইশী, সভাপতি, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইয়াসিন আলী। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ১৪ দলের প্রার্থী ছিলেন। সেবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুল হক প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ইমদাদুল হকের পক্ষে কাজ করেন। এতে ইয়াসিন আলী বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমানের কাছে বিপুল ভোটে পারজিত হন। দীর্ঘদিন দলের প্রার্থী না পাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, এই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ভোট খুবই সামান্য। এরপরও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইয়াসিন আলীকে ১৪ দলের প্রার্থী করা হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর পাশে থেকে তাঁকে বিজয়ী করেন। কিন্তু বিজয়ী হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীর মূল্যায়ন করেননি। সে কারণে ২০১৮ সালে তাঁকে আবার মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হকের পক্ষে অবস্থান নেন। উপনির্বাচনে এবারও ইয়াসিন আলীকে ১৪ দলের প্রার্থী করার বিষয়টি ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তবে সরাসরি বিরোধিতা না করলেও তাঁদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নেই।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ইয়াসিন আলীর সঙ্গে ছিলেন পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক। আর রানীশংকৈলে ইয়াসিন আলীর হাতুড়ি প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের দিন সেখানে রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সইদুল হক বক্তব্য দেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে হাতুড়ি প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়নি।
এদিকে ১৭ জানুয়ারি ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ইয়াসিন আলীর বিজয় সুনিশ্চিতে সহযোগিতার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশীকে একটি চিঠি দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে ইয়াসিন আলীর পক্ষে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।
রানীশংকৈল পৌর শহরের আওয়ামী লীগের কর্মী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলা নৌকার ঘাঁটি হওয়ার পরও আমরা দীর্ঘদিন দলের প্রার্থী পাচ্ছি না। তা ছাড়া ১৪ দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তার ওপর আমাদের ভরসা নেই। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে সেভাবে নেই।’
১৪ দলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেননি বলে অভিযোগ রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সইদুল হকের। তিনি বলেন, ১৬ জানুয়ারি তাঁরা বর্ধিত সভা করে ১৪ দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তৈরি আছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ডাকলেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘ভোট তো করছি।’ মাঠে প্রচারণার সুযোগ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না উনি (ইয়াসিন আলী) এখনো সেই ব্যবস্থা করেননি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন আমরা তাঁর পাশে ছিলাম। বর্ধিতসভা করে তাঁকে (ইয়াসিন আলী) সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর বাইরেও উপজেলার ৯৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি তাঁর দলের গুটিকয় কর্মী নিয়ে ছোটাছুটি করলেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না।’
তবে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলী বলেন, যেমনটি থাকার কথা ছিল, আওয়ামী লীগ এখনো সেভাবে মাঠে নেই। তাঁরা দু–একটা কর্মসূচিতে থাকলেও স্বতঃস্ফূর্ত নন।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে গতবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। অসুস্থ হওয়ায় তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকেই তাঁর সঙ্গে ছিলাম। এর থেকে আর কী করতে পারি? দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া কোনো সুযোগ নেই।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদকের চিঠি পেয়ে ১৪ দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য তৃণমূলের নেতাদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুটি উপজেলায় দলের বর্ধিতসভা আহ্বান করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। কীভাবে কাজটি হবে, সেটা তো প্রার্থীকে পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা তো তাঁকে সহযোগিতা করতে চাচ্ছি। কিন্তু তাঁর কী সহযোগিতা লাগবে, তা তো তিনি বলছেন না। আশা করছি, এ সমন্বয়হীনতা কেটে যাবে।’