সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ও বি এম ফরহাদ হোসেন
সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ও  বি এম ফরহাদ হোসেন

সব পক্ষের সমর্থন পাচ্ছেন স্বতন্ত্র একরামুজ্জামান, নৌকার প্রার্থীর দুশ্চিন্তা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন পক্ষকে পাশে পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশও তাঁর জন্য মাঠে নেমেছে। তাঁর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বি এম ফরহাদ হোসেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ এই আসনের উপনির্বাচনে ৮২ হাজার ৯৬টি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন ফরহাদ হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, প্রায় ছয় বছর দুই দফা সংসদ সদস্য থাকাকালে ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে দলের অনেক কর্মী-সমর্থকের দূরত্ব তৈরি হয়। কিছু নেতা-কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা রয়েছেন। এ কারণেই এবার তাঁর আসনে ৯ নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ফরহাদ হোসেন মনোনয়ন পেলেও দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ঘোচেনি। তাঁদের মধ্যে ছয়জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী একরামুজ্জামানকে (কলার ছড়ি) সমর্থন দিয়েছেন। ফলে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও একরামুজ্জামান নির্বাচনী মাঠে প্রভাব ফেলতে পেরেছেন।

এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহনুল করিমও স্বতন্ত্র প্রার্থী একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তাঁরা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সরব হয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী থাকলেও এ আসনে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস দেখছেন ভোটাররা। এই দুই পক্ষের একাধিকবার প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ভোটের পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে।

গতকাল রোববার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে অন্তত ১৫ ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচন বর্জন করছে। কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে বহিষ্কৃত নেতা একরামুজ্জামান এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল কিছু নেতা বাদে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই একরামুজ্জামানকে নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পাশাপাশি উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছেন। এমনকি তাঁর পক্ষে কেন্দ্রে ভোটার টানতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরাও মাঠে সরব।

চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্য ও উপজেলা সদরের দুই শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট সর্বদা নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখে। এবার তাদের বড় একটি অংশ একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থক যাঁরা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন এক সাংবাদিক ও এক ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে এক সমর্থক নির্বাচনী বৈঠকে প্রয়োজনে খুন করার হুমকিও দিয়েছেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। অপর দিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা সদরের নাসিরপুর বাজারে একরামুজ্জামানের জনসভা থেকে নৌকার প্রার্থীকে ৭ তারিখের পর নাসিরনগরে মাটিতে পা রাখতে দিবে না বলে হুমকি দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রীকে পৃথক পৃথকভাবে সশরীর কার্যালয়ে হাজির হয়ে লিখিতভাবে হুমকির ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরা উভয়ই লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেনও।

কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. নাজির মিয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম মনিরুজ্জামান সরকার এবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে তাঁরা একরামুজ্জামানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তাঁরা দুজনই প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার অনেক নেতা–কর্মী বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের কাছে লাঞ্ছিত হয়েছেন। নেতা–কর্মীরা তাঁর কাছে সম্মান পাননি। তাই দলের নেতা–কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। নেতা–কর্মীদের মনে অনেক জ্বালা।

এ বিষয়ে নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের অসীম কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, কেউ যদি অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেন, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কেউ যদি নৌকা থেকে নেমে যান, যাবেন। অনেক বড় বড় নেতারাই নেমে গেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘তাঁরা চেষ্টা করতেছেন। তাঁরা তাঁদের চেষ্টা করুক। আমরা আমাদের চেষ্টা করছি। আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি।’