তিস্তা নদীর পানি কমায় ভাঙন বেড়েছে। আজ শনিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকায়
তিস্তা নদীর পানি কমায় ভাঙন বেড়েছে। আজ শনিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকায়

রংপুরে তিস্তার পানি কমছে, নতুন করে ভাঙন

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির ঢেউ এসে নদীর তীরে ধাক্কা লাগছে। এতে ভাঙছে নদীর তীর ও বসতভিটা। দুশ্চিন্তায় আছেন তিস্তাপারের লোকজন।

কাউনিয়ায় তিস্তা সেতু এলাকায় গতকাল শুক্রবার নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ শনিবার সকালে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, তিস্তা সেতু এলাকায় পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানি আরও কমে যাবে। তবে পানি কমলেও ভাঙনের আশঙ্কা আছে।

আজ সকালে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই এলাকায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীর কিনারে দেখা যায়। এসব বসতভিটার লোকজন বাড়িঘর কোথায় সরিয়ে নেবেন, তা নিয়ে বিপাকে আছেন। ৫৫ বছর বয়সী কৃষক আনসার আলীর এক বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন মাত্র পাঁচ শতক জমির ওপর বসতভিটা আছে। এখানে-ওখানে কাজ করে সংসার চলে তাঁর। আনসার আলী বলেন, ‘এবার বসতভিটা নদীত চলি গেইলে, আর কোনো জমি থাক পার নয়। নদী হামার শোগ শেষ করি দেলে।’

নদীভাঙন–কবলিত উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই এলাকায় এক মাস আগে ১৮০ মিটার স্থানে নদীর ভাঙন রোধে দুই হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়। স্রোতের তোড়ে বেশির ভাগ বস্তা ভেসে গেছে। আবদুল মালেকের টিনের বাড়ি। চারটি ঘর। ভাঙনের মুখে বাড়িঘর ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। তিনি বলেন, ‘ঘর ভাঙিয়া যে অন্যটে সরে নিয়া যামো, সেই জায়গাও নাই। কারও জমি ভাড়া নেওয়া লাগবে। হাতোত কোনো টাকাও নাই। সেই চিন্তায় ঘুম হয় না।’

৫০ বছর বয়সী হাফেজ আলীর ৩০ শতাংশ আবাদি জমি এক বছরের মধ্যে নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এবার বসতভিটা ভাঙনের মুখে। যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। হাফেজ আলী বলেন, ‘গত বছর বন্যার সময় নদী অনেক দূরোত আছলো। এবার পানি বাড়া-কমার কারণে তাড়াতাড়ি ভাঙন শুরু হইছে। এবার আর বসতভিটা রক্ষা হওছে না।’

তিস্তার ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকায়

বসতভিটা নদীভাঙনের কবলে আছে স্থানীয় বাসিন্দা ফুল মিয়া, সুরুজ আলী, আবেদ আলীসহ আরও অনেকের। বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গদাই গ্রামে প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস। এর মধ্যে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে।

বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনসার আলী বলেন, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। মানুষজন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা ফেলে রক্ষা করার চেষ্টা করা হলেও তা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বালুর বস্তাও নদীতে বিলীন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, নদীভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এক মাস আগে এক হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ভাঙন রোধে চেষ্টা চলানো হচ্ছে।