‘মওলানা ভাসানী ও নতুুন বাংলাদেশ " শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া । আজ বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে
‘মওলানা ভাসানী ও নতুুন বাংলাদেশ " শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন  অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া । আজ বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে

এই প্রজন্ম নতুন করে যত দিন দায়িত্ব না নেবে, তত দিন এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ হবে না: উপদেষ্টা আসিফ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘দেশে একটি দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রশাসনের প্রত্যেকটি মানুষের মননে মগজে যে ফ্যাসিবাদী চিন্তা, যে প্রভুত্বশালী চিন্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি এক দিনে কিংবা আমি মনে করি ১০ বছরেও উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। পুরো একটি প্রজন্মকে সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে উঠে আসতে হবে, দাঁড়াতে হবে। এই প্রজন্ম প্রশাসনের প্রতিটি জায়গায় নতুন করে যত দিন দায়িত্ব না নেবে, তত দিন পর্যন্ত এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিলোপ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

আজ বুধবার টাঙ্গাইলের সন্তোষে ‘মাওলানা ভাসানী ও নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সরকারের এই উপদেষ্টা।

কবি ও লেখক ফরহাদ মজহারের সভাপতিত্বে সভায় প্রবন্ধ পাঠ করেন ভাসানী পরিষদের সদস্যসচিব আজাদ খান ভাসানী। স্বাগত বক্তব্য দেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। বক্তব্য দেন ভাসানী ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাহমুদুল হক, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সারোয়ার তুষার ও অলিক মৃ, নাগরিক কমিটি টাঙ্গাইল শাখার কামরুজ্জামান শাওন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত মারুফের মা মোর্শেদা বেগম, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ফাতেমা রহমান, আবু আহমেদ শেরশাহ প্রমুখ। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন মাসুদুর রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আজাদ খান।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘৭২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তার ভিত অনেক গভীরে। আমরা শুধু গাছটা কাটতে পেরেছি; কিন্তু তার শিকড় এখনো উৎখাত করতে পারিনি, সেই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। সেই শিক্ষা মাওলানা ভাসানী আমাদের দিয়েছেন। সেই পথ আমাদের দেখিয়েছেন। কীভাবে সে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, সে রাস্তা তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আমরা সেটি অনুসরণ করতে চাই এবং লড়াইয়ে সফলকাম হতে চাই।’

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘এ দেশের ইতিহাসকে ক্ষমতাসীনেরা বারবার তাদের মতো মোল্ড করে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু আমরা সেই বানানো ইতিহাসের দেয়ালে প্রথম আঘাতটা করতে পেরেছি। আমরা বলেছি যে এখানে কোনো একক জাতির পিতা নেই, আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদার্স রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান একজন হলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশের যে ইতিহাস রয়েছে, সেই প্রকৃত ইতিহাসটা তাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।’

প্রধান আলোচক অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী দীর্ঘ লড়াই করেছেন, জীবনভর মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। সব সময় বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এটা আমাদের জন্য বিশেষ করে এই প্রজন্মের জন্য পাথেয়।’

সভার সভাপতি ফরহাদ মজহার বলেন, ‘উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান আর ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে যে ধারা আজকে একটা স্রোতে এসে মিলিত হয়েছে, এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। যে দুর্বার স্রোত তৈরি হবে বাংলাদেশে, এটা ঠেকাবার কোনো ক্ষমতা আমরা দেখি না, আমরা রাখব না। আমরা যারা ভাসানীর ছবি বুকে নিয়ে বেঁচে আছি, আপনারা তাঁর ছবি মুছে ফেলেছেন সব জায়গা থেকে। আর শেখ মুজিবের ছবি নামালে আপনারা আপত্তি করেন। এটা হবে না।’

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘ফ্যাসিজম কীভাবে দাঁড়ায়, সে আমাদের ইতিহাস মুছে দিয়ে নিজেকে কায়েম করে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক নাই, সোহরাওয়ার্দী নাই, কেউ নাই। একটি আইকন আছে শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি মূলত ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ কায়েম করেছিলেন শুধু মতাদর্শ হিসেবে নয়। একটা রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের ভিত্তিতে। জুলাই অভ্যুত্থান সেই মতাদর্শের ভিত্তি উপড়ে ফেলেছে।’

আলোচনা সভার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি, যাঁরা দীর্ঘ লড়াইয়ে আমাদের সঙ্গে এবং পক্ষে ছিলেন তাঁদের নিয়ে সরকার গঠন করা। আমাদের কাছে অনেকগুলো প্র্যাক্টিক্যালিটি ছিল, যার বেশির ভাগ আমরা পূরণ করতে পেরেছি। আমরা মনে করি যে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষার পক্ষেই থাকবেন। তার পরও যদি জনগণের কোনো অসন্তোষ বা অসংকোচ থাকে, তাহলে তাঁদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে তাঁরা জনগণের পক্ষেই আছেন।’

সভায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত স্কুলছাত্র মারুফের নামে টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের নামকরণের ঘোষণা দেন।

এর আগে সন্তোষে পৌঁছে দুই উপদেষ্টা মাওলানা ভাসানীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।