বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তন; গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে গণশুনানি হয়। সেখানে কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দেশি মদের অবৈধ কারবারের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিল, জমি দখল ও অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দাবি করা হয়।
শুনানি শেষে তরুণ কুমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। তবে পরে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অনুসন্ধান বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তরুণ কুমার আত্মগোপনে আছেন। এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর দুদকে পুনরায় তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন বগুড়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র আমিনুল ফরিদ। তরুণ কুমারের নামে–বেনামে অবৈধ সম্পদের একটি তালিকাও দিয়েছেন তিনি।
তরুণ কুমার চক্রবর্তী (৫৭) বগুড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ২০১৫ ও ২০২১ সালে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থনে দুই দফায় নির্বাচিত হন তিনি। দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে কেন্দ্র দখল ও নির্বাচনী ফলাফল ছিনতাইয়ের অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর বড় ভাই বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক তপন কুমার চক্রবর্তী। আরেক ভাই স্বপন কুমার চক্রবর্তী পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক।
বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় নানা শ্রেণি–পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস তরুণ কুমারের। আশির দশকে শহরে ‘বসন্ত আয়ুর্বেদ ফার্মেসি’ নামে একটি কবিরাজি চিকিৎসালয় খুলে সালসা-মদক ও সঞ্জীবনী সুরা বিক্রি করতেন তাঁর বাবা রুক্ষ্মিণী নাথ চক্রবর্তী। তিন ভাই—তপন কুমার, তরুণ কুমার ও জয়ন্ত কুমার বাবার ব্যবসায় সহায়তা করতেন।
কাটনারপাড়া খাজা লেনের প্রবীণ বাসিন্দা সামসুল মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, তিন দশক আগেও এ–পাড়ার সলিম খাজার টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তরুণ কুমার ও তাঁর পরিবার। তখন সহায়সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না তাঁদের। মদক-সালসা আর সঞ্জীবনী সুরা বিক্রি করে সংসার চলত। পরে এই সালসার দোকানেই দেশি মদ বিক্রি শুরু করেন। অল্প দিনেই প্রচুর টাকার মালিক বনে যান তাঁরা।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বগুড়া জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় আরও বেপোরোয়া হয়ে ওঠেন তরুণ কুমার। সম্পদের পাশাপাশি বেড়ে যায় তাঁর ব্যবসার পরিধিও।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভাগ্য খুলে যায় তরুণ কুমার চক্রবর্তীর। তিনি মদের কারবারের সঙ্গে অন্যের জায়গাজমি দখল করেন; অল্প দিনেই মালিক হন বিপুল অর্থবিত্তের। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বগুড়া জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় আরও বেপোরোয়া হয়ে ওঠেন তরুণ কুমার। সম্পদের পাশাপাশি বেড়ে যায় তাঁর ব্যবসার পরিধিও।
রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় বিপুল সম্পদের মালিক
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরুণ কুমার বগুড়া শহরের দত্তবাড়ি পানির ট্যাংকি লেনে গৌরগোপাল কুণ্ডুর কাছ থেকে ছয় শতক জায়গা কিনে সেখানে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে সেখানেই পরিবারসহ বসবাস তরুণ কুমার চক্রবর্তী ও তাঁর অন্য ভাইদের। এ বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। বছর চারেক আগে প্রতিবেশী গোরা চাঁদের কাছ থেকে দোতলা ভবনসহ সাড়ে চার শতক জায়গা কেনেন তরুণ কুমার। ছয়তলায় সম্প্রসারণের পর বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন তিনি। ভবনসহ এ জায়গার বাজারমূল্য আনুমানিক চার কোটি টাকা। শহরের শিববাটি শাহি মসজিদ লেনে ছয় শতক জমিতে টিনশেডের আরও দুটি বাড়ি রয়েছে তরুণ কুমারের। এ দুটি বাড়ির বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।
এ ছাড়া বগুড়া শহরের ব্যস্ততম দত্তবাড়ি শহীদ তারেক সড়কে দোতলা ভবনে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর তরুণ কুমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভবনসহ ১৪ শতক জায়গা কেনেন। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি ছয়তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ওই ভবনে তন্ময় ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেল, তন্ময় কমিউনিটি সেন্টার ও লিলিয়ান চায়নিজ রেস্তোঁরার অবস্থান। জায়গা-অবকাঠামোসহ এর বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
তন্ময় কমিউনিটির পাশেই ১৪ শতক জমিতে চারতলা ভবন। সেখানে তরুণ কুমারের ভোগ্যপণ্যের পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলে। জায়গাসহ এ ভবনের বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া শহরের দত্তবাড়ি শতাব্দী পেট্রলপাম্পের পাশে প্রধান সড়কে যৌথ মালিকানায় আছে ২১ শতক জায়গা। এ জায়গার বাজারমূল্য অন্তত ২১ কোটি টাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ জায়গায় হিন্দু পরিবারের বসতভিটা ছিল। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী স্থানীয় এক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ওই জায়গা দখল করেন তরুণ কুমার।
শহরের ঝাউতলা এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে এসডি কমপ্লেক্সে আছে তন্ময় হার্ডওয়্যার। শহরের সাতমাথায় এমএ খান লেনে আছে অর্পিত সম্পত্তিতে তন্ময় ইলেকট্রনিকস, তন্ময় কনফেকশনারি এবং দেশি মদের বিক্রয়কেন্দ্র সিএস শপ (বসন্ত আয়ুর্বেদ)। শহরের নিউমার্কেটের দোতলায় তরুণ কুমারের একটি তৈরি পোশাকের দোকান আছে বলেও স্থানীয় লোকজন জানান। শহরতলির সাবগ্রাম এলাকায় ৬২ শতক জায়গাজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সেমাই ও বিস্কুট-চানাচুর উৎপাদনের কারখানা (তন্ময় ফুড অ্যান্ড কনফেকশানারি)। পাশেই বিশাল এলাকাজুড়ে খামারবাড়ি।
ভূমিদস্যুতার যত অভিযোগ
বগুড়া শহরের শিববাটি মহল্লার ইন্দারার মোড় এলাকায় সাড়ে পাঁচ শতক জায়গাসহ একটি গুদাম দখলের অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর তরুণ কুমারের বিরুদ্ধে। পৈতৃক সূত্রে জায়গাটির দাবিদার আইনজীবী ফয়জুর রহমান চৌধুরী। তিনি একসময় প্রয়াত অর্থ প্রতিমন্ত্রী মজিবর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন।
২০২২ সালের ১৩ জুন দিনেদুপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে কাউন্সিলর তরুণ গোডাউনসহ জায়গা দখলে নেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় জায়গাটি জবরদখল করা হয়েছে। তাঁর কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।ফয়জুর রহমান চৌধুরী, ভুক্তভোগী
১৭ সেপেটম্বর বিকেলে শিববাটি মহল্লায় গিয়ে কথা হয় ফয়জুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ১৩ জুন দিনেদুপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে কাউন্সিলর তরুণ গোডাউনসহ জায়গা দখলে নেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় জায়গাটি জবরদখল করা হয়েছে। তাঁর কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। আদালতে মামলা করেছি। আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলেও কাউন্সিলর তরুণ কুমারের ক্যাডার বাহিনীর হুমকিতে এত দিনেও ওই জায়গায় যেতে পারিনি।’
কাউন্সিলর তরুণ কুমার ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে শিববাটি ইন্দারার মোড় এলাকার সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা প্রায় আড়াই শতক জায়গা দখলে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও কাটনারপাড়া শহীদ তারেক সড়কের বাসিন্দা আবদুল হাই চৌধুরী। ওই জমি উদ্ধারে সহায়তা চেয়ে আবদুল হাই চৌধুরী ১৬ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
বগুড়া শহরের কালীতলা এলাকার ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শহরের মাটিডালি এলাকায় বারবাকপুর মৌজায় শহরের প্রধান সড়কের পাশে এক বিঘা জমির ওপর তাঁর স মিল ছিল। কবলা দলিল সূত্রে ওই জমির মালিক তাঁর নানা হামিদ মণ্ডল। জায়গাটি পরে তাঁর বাবা মোহাম্মদ হোসেনকে লিখে দেন। এ জায়গার মালিক তাঁরা ৯ ভাই–বোন ও তাঁদের মা। যোগসাজশী দলিল সৃষ্টি করে জায়গাটির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর কাছ থেকে যুবলীগের এক নেতার নামে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ তৈরি করে গত বছর কাউন্সিলর তরুণ কুমার জায়গাটি দখলে নেন। স মিল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট করা হয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি। বাধ্য হয়ে জবরদখলের মামলা দিয়েছেন।
বড়গোলা টিনপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী আমিরুল কবির প্রায় তিন দশক আগে শহরের দত্তবাড়ি পানির ট্যাংকি লেনের মুখে প্রধান সড়কের পাশে ২৫ শতক জায়গা কিনে বসবাস করে আসছিলেন। ২০১২ সালে তরুণ কুমার প্রধান সড়ক–সংলগ্ন ৫ শতক জায়গা দখল করেন এবং মন্দিরের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এই সম্পত্তির বাজারমূল্য বর্তমানে পাঁচ কোটি টাকা। আমিরুল দাবি করেন, এ সম্পত্তির দখল ছেড়ে দিতে দেড় কোটি টাকা দাবি করেছিলেন কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্তী। বর্তমানে আদালতে উচ্ছেদ মামলা চলছে।
এ ছাড়া ২০০৮ সালে বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বগুড়া কটন স্পিনিং কোম্পানি লিমিটেডের শ্রমিকদের দোতলা ভবনের আবাসিক কোয়ার্টারসহ ২০ শতক জায়গা ভুয়া দলিলের মাধ্যমে দখলের অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে।
দেশি মদের কারবার
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বগুড়ার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি মদ পানের জন্য শহরের সুইপার, হরিজনসহ বিশেষ শ্রেণির ২ হাজার ৪৪০ ব্যক্তিকে পারমিট দেওয়া রয়েছে। প্রতি মাসে ২৩ হাজার ১৮০ লিটার মদ বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। পারমিট নেওয়া ব্যক্তিরা শুধু কার্ড প্রদর্শন করে শহরের সাতমাথায় দেশি মদের দোকান থেকে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ লিটার মদ কিনে পান করতে পারবেন। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৬ বছর নিয়মকানুনেন তোয়াক্কা না করে মদের কারবার চালিয়েছেন তরুণ কুমার চক্রবর্তী। পারমিট কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে তাঁর দোকানে দেশি মদ বিক্রির কথা থাকলেও সব পারমিট তিনি নিজের কবজায় রেখেছেন। এসব কার্ডের বিপরীতে প্রতিমাসে বরাদ্দের মদ তুলে নিয়ে অবাধে বিক্রি করা হয়েছে।
১৭ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় শহরের সাতমাথায় এম খান লেনে গিয়ে দেখা যায়, তন্ময় ইলেকট্রিক ও তন্ময় ফুড অ্যান্ড কনফেকশানারির মাঝখানে বসন্ত আয়ুর্বেদ সালসা-মদকের দোকানেই ছোট প্যানায় লেখা ‘বগুড়া সদর সিএস শপ’। সেখানে বিক্রি হচ্ছে বোতলভর্তি দেশি মদ। বেশির ভাগ ক্রেতা কুলি, মজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক,সুইপার ও ডোম। তরুণ-কিশোরেরাও দোকান থেকে মদ কিনছে। দোকানে মদ কিনতে আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, পারমিট কার্ড ছাড়াই কেনা যায় দেশি মদ।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভেজাল মদ পান করে ১৮ জন মারা যান। তখন তরুণ কুমারের মদের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়।
২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর দুর্গোৎসবে শহরের শিববাটি এলাকায় দেশি মদ পান করে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। শহরের করোনেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগ তুলে সাতমাথার দেশি মদের দোকানে বৈধ কারবার বন্ধের দাবিতে শহরে সমাবেশ হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনেও অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভেজাল মদ পান করে ১৮ জন মারা যান। তখন তরুণ কুমারের মদের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়।
পরিবারের বক্তব্য
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে আছেন তরুণ কুমার। ১৭ সেপ্টেম্বর তন্ময় কমিউনিটি সেন্টারে কথা হয় তাঁর বড় ভাই বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক তপন কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গাড়ি-বাড়ি সবকিছুরই আমরা তিন ভাই অংশীদার। আমাদের অবৈধ কোনো সম্পদ নেই।’
শতভাগ নিয়ম মেনে মদের ব্যবসা করা সম্ভব নয়। পারমিট কার্ড জমা রাখাসহ কিছু অস্বচ্ছতা সেখানে থাকতে পারে।মদের অবৈধ কারবার প্রসঙ্গে তপন কুমার
জমি দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তপন কুমার বলেন, দত্তবাড়ি পেট্রলপাম্পের পাশে যে ২১ শতক জায়গা কেনা হয়েছে, তা অন্য আরও দুজন অংশীদার রয়েছেন। দত্তবাড়ি পানির ট্যাংকি গলির মুখে ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম যে পাঁচ শতক জায়গা দখলের অভিযোগ করছেন, এটি মন্দিরের জায়গা। তরুণ নয়, বেদখল হওয়া এই জায়গা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা এটি দখলমুক্ত করেছেন। শিববাটি ইন্দারার মোড়ে আইনজীবী ফয়জুর রহমান এবং কলেজশিক্ষক আবদুল হাই যে দুটি জায়গা দখলের অভিযোগ করেছেন, তা কবলা সম্পত্তি। ওই এলাকায় দুটি টিনশেড বাড়ি বিক্রি করে এটি কবলা করা হয়েছে। মাটিডালি এলাকায় এক বিঘা জমি কিনেছেন অন্য এক ব্যক্তি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তরুণ সেখানে মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন। বগুড়া কটন স্পিনিং কোম্পানি লিমিটেডের কোনো জায়গা দখল করা হয়নি। সেখানে কিছু জায়গা খরিদ করা হয়েছে।
দেশি মদের অবৈধ কারবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তপন কুমার বলেন, ‘শতভাগ নিয়ম মেনে মদের ব্যবসা করা সম্ভব নয়। পারমিট কার্ড জমা রাখাসহ কিছু অস্বচ্ছতা সেখানে থাকতে পারে।’
হলফনামায় তথ্য গোপন
তরুণ কুমারের বিপুল পরিমাণ জমি ও অর্থ থাকলেও নির্বাচন কমিশনে দাখিল হলফনামায় এর তথ্য নেই। ২০১৫ সালের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় দাখিল করা হলফনামায় দেশি মদের দোকান, তন্ময় হার্ডওয়্যার স্টোর, তন্ময় ইলেকট্রিক ও বসন্ত আয়ুর্বেদের তথ্য দেন। ওই সময় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। হাতে নগদ ১ লাখ, ব্যাংকে ৪০ হাজার টাকা আর স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ছাড়া কোনো অস্থাবর সম্পদ ছিল না। নিজ নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৮১ শতক আবাদি জমি, তিনটি বাড়ি, ২২ দশমিক ৯২ শতকের একটি অ্যাপার্টমেন্ট, স্ত্রীর নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দুই শতকের একটি বাড়ির মালিকানার তথ্য দেন। তবে তিনি লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য গোপন করেন।
২০২১ সালের হলফনামায় পাঁচ বছরের ব্যবধানে বার্ষিক আয় কমে ৫ লাখ ২০ হাজারে নেমেছে বলে উল্লেখ করেন তরুণ কুমার। পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ কমে নগদ ৩০ হাজার, ব্যাংকে ৩ লাখ, নিজের ২০ তোলা স্বর্ণালংকার, স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণালংকারের তথ্য দেন। পাঁচ বছর আগে বাড়ি ও জায়গাজমির কথা বললেও ২০২১ সালে শুধু ৮৫ শতক কৃষি ও অকৃষি জমি, যৌথ মালিকানায় তন্ময় কমিউনিটি সেন্টার এবং তিনটি টিনশেড বাড়ির তথ্য দেন। এ ছাড়া সিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ফাইন্যান্সে তাঁর ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দায়দেনার কথা উল্লেখ করেন।