ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান প্রয়াত সাত্তারের ছেলে, কী বলছেন স্থানীয় নেতারা

মাইনুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার একমাত্র ছেলে মাইনুল হাসান। তবে তাঁর মনোনয়ন চাওয়াটাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। পরদিন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ৫ নভেম্বর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারিতে এ আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় প্রতীক নিয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত্তারের ছেলের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ আছে কি না, জানি না। সরাইল-আশুগঞ্জের গণমানুষের প্রত্যাশা, আমজনতার দাবি, এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হোক। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যে কাউকেই মনোনয়ন দিতে পারেন। তবে আমাদের প্রত্যাশা, দলীয় কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।’

গত ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের দুজন শক্তিশালী প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তাঁরা দলের চাপে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁদের একজন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদ মাহবুবুল বারী চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত উপনির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। এই নির্বাচনেও আমি প্রার্থী হব। সাত্তারের ছেলে দলের প্রাথমিক সদস্যও নন। দলে যোগদানও করেননি। আমি মনে করি, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করে আসছেন, তাঁদের কাউকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও জনগণ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।’

গত উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর মতো একজন লোকের (সাত্তারের ছেলে) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়াটই একটা ধৃষ্টতা। দলে এমন আকাল হয়নি যে তাঁকে মনোনয়ন দিতে হবে। এখানে অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। আমার বিশ্বাস, দলের জন্য ত্যাগ আছে, এমন একজনকেই নেত্রী এখানে মনোনয়ন দেবেন।’

সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মনোনয়নপ্রত্যাশী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় না দল তাঁকে (সাত্তারের ছেলে) মনোনয়ন দেবে। আমার ধারণা, তৃণমূলের নেতাদের নেত্রী মূল্যায়ন করবেন।’

প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাইনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির কোনো পদে ছিলাম না। এখন আমি দল থেকে নির্বাচন করতে গেলে তো কোনো পদ নিতেই হবে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেব।’ আগে এক দলের সঙ্গে ছিলেন, এখন অন্য দলের হয়ে নির্বাচন করলে আগের মতো সুবিধা পাবেন কি না, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট এলাকা আছে। যেমন পাকশিমুল, অরুয়াইল ও চুন্টা ইউনিয়ন। এখানকার মানুষ আমার বাবাকে তাঁদের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। সেই সমর্থন পাব। এ ছাড়া নৌকা প্রতীক পেলে আশা করি দলের সবাই আমার সঙ্গে থাকবে।’

ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত ও হাওরবেষ্টিত পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি দুবার স্বতন্ত্র এবং চারবার বিএনপির দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। চারদলীয় জোটের আমলে (২০০১-০৬) তিনি টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৯ ডিসেম্বর দল তাঁকে বহিষ্কার করে। এরপর ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন।