এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগে এত দিন প্রকাশ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ও বিভেদ দেখা যায়নি। মহানগর আওয়ামী লীগ ও নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের কমিটিগুলো বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছিলেন। সে জন্য অন্য কেউ মনোনয়ন চাইবেন, এমনটা ভাবার সুযোগ ছিল না। ফলে এত দিন ধরে নেওয়া হয়েছিল, আগামী সিটি নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহই এখানে একক প্রার্থী।
কিন্তু তফসিল ঘোষণার আগেই এই সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন পেতে মাঠে নামেন সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। এর আগে অনেক দিন ধরেই মাঠে আছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান ওরফে মামুন। তবে হালে যোগ হয়েছেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। মাহমুদুল হক ও জসিম উদ্দিন দুজনই বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী। গত রোববার প্রথম দিনেই এই তিনজন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ফলে মনোনয়ন দৌড়ে এখন সাদিক আবদুল্লাহ অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বলে মনে করছেন ভোটার ও সচেতন নাগরিকেরা।
মহানগর আওয়ামী লীগ এখানে সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করবে। তাঁর পক্ষে আমরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ফরম সংগ্রহ করেছি।এ কে এম জাহাঙ্গীর, সভাপতি, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ
মনোনয়নপ্রত্যাশী নগর যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম কিনেছি। বুধবারের মধ্যে জমা দেব। আমি স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরপর দীর্ঘ দুই যুগের বেশি নগরের মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থেকে কাজ করছি।’
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বেশ কৌতূহল লক্ষ করা যাচ্ছে কয়েক দিন ধরে। বিশেষ করে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের মাঠে নামায় যেন মুহূর্তেই হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। ফলে জটিল রাজনীতির সমীকরণে ভোটার ও রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিদের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে—কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। এই কৌতূহলের মূল কারণ আবুল খায়েরের মনোনয়ন চাওয়া।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে অনেক দিন ধরেই নগরে গুঞ্জন ছিল। তবে এত দিন বিষয়টি খোলসা করেননি। নানা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ, বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এমনকি প্রতি মাসেই একটা বড় সময় বরিশালে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা করার পর তিনি আরও বেশি তৎপর হন।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার বিকেলে মনোনয়ন ফরমটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে দলমত–নির্বিশেষে নগরের সর্বস্তরের মানুষের বিপুল সাড়া পাবেন এবং বিজয়ী হবেন বলেও আশাবাদী তিনি।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে পড়েছেন বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, তিনি বর্তমানে দিল্লির আজমির শরিফ সফরে আছেন। তিনি পরিবার নিয়ে আজমির শরিফ জিয়ারতের উদ্দেশে গেছেন। ফলে রোববার মনোনয়ন চেয়ে ফরম বিক্রির প্রথম দিনে তাঁর পক্ষে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। সোমবার তাঁর পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ এখানে সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করবে। তাঁর পক্ষে আমরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ফরম সংগ্রহ করেছি।’ আবুল খায়ের আবদুল্লাহর তৎপরতাকে দলে বিভেদ-বিভক্তি মনে করছেন না এ কে এম জাহাঙ্গীর। তিনি বললেন, মহানগর আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁর কোনো বিকল্প নেই এখানে।
৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৬ মে। ১৮ মে মনোনয়নপত্র বাছাই ও ২৫ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন প্রার্থীরা। ২৬ মে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটকেন্দ্র ১২৩টি। মোট ভোটার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪০৭ জন।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের প্রাধান্য দেবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন অধিক গুরুত্ব দিয়ে তা নিশ্চিত করবে। এটা করতে পারলেই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব।’