ময়মনসিংহে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাবারের সংকট বাসাবাড়িতে। ফলে খাবারের জন্য রেস্তোরাঁয় ভিড় করেছেন অনেকে। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে নগরের গাঙ্গীনাপাড় এলাকায়
ময়মনসিংহে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাবারের সংকট বাসাবাড়িতে। ফলে খাবারের জন্য রেস্তোরাঁয় ভিড় করেছেন অনেকে। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে নগরের গাঙ্গীনাপাড় এলাকায়

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ময়মনসিংহে খাবারের জন্য হাহাকার

ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইন ফেটে যাওয়ায় পুরো জেলায় গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে আবাসিক গ্রাহকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। রান্না করতে না পারায় পরিবারগুলোয় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয়ও পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যাচ্ছে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে খাবারের জন্য শহরজুড়ে অনেকটা হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়। সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে অনেকে রান্না করলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। রেস্তোরাঁ ঘুরে খাবার না পেয়ে অনেকে শুকনা পাউরুটি নিয়ে বাসায় ফেরেন।

বেলা সোয়া তিনটার দিকে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের ক্যানটিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যানটিনটি তালাবদ্ধ। সেখানে সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে রান্না করা হয়েছিল; তবে বেলা দুইটার আগেই খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্যানটিন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান সেখানকার কর্মী শামছু মিয়া।

শহরের গোলপুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দা আরিফ হাসান রেস্তোরাঁয় খাবার না পেয়ে খালি হাতে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভাবিনি। গ্যাস না থাকায় ঘরে খাবার নেই, বাইরের হোটেলেও খাবার নেই।’

বেলা সোয়া তিনটার দিকে গাঙ্গীনাপাড় এলাকার নবান্ন রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে খাবারের জন্য হুড়োহুড়ি। এক প্যাকেট বিরিয়ানির জন্য ৫০ জনের বেশি লোক দাঁড়িয়েছিলেন। রেস্তোরাঁটির মালিক এমদাদুল হক বলেন, প্রতিদিন ৪০০-৫০০ মানুষের জন্য তেহারি ও মোরগ পোলাও করা হয়। কিন্তু মানুষের বাসায় গ্যাস না থাকায় আজ রেস্তোরাঁয় চাপ বেড়ে গেছে। তাঁরা সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে যা রান্না করেছেন বেলা সাড়ে তিনটার দিকেই তা শেষ হয়ে গেছে।

তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে পাশে ডিফেং ইকোনমিক জোন নামে চীনা একটি কোম্পানির কাজের পাইলিং করতে গিয়ে তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইন ফেটে যায়। এ ঘটনার পর দিনভর গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও মেরামত কাজের জন্য রাত ১১টার পর সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিতাস গ্যাস কোম্পানি ময়মনসিংহের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) কাজী মোহাম্মদ সাইদুল হাসান বলেন, ‘গ্যাস বন্ধের বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছিল। তবে সেটা অনেক গ্রাহক শুনতে না–ও পারেন। হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটায় আমাদের প্রস্তুতিও ছিল না। তারপরও ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রাহকদের মুঠোফোনে জানানো হয়েছে, মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়।’ তিনি আরও বলেন, আজ সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মেরামত কাজ শেষ হতে পারে। মেরামতের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যদি ঠিক থাকে, তবে লাইন চালু হবে, তা না হলে আরও সময় লাগবে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, গ্যাস থাকবে না, এই খবর আগেভাগে জানালে বিকল্প ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু রাতের বেলায় যখন মাইকিং করা হয়, তখন আর কিছুই করার ছিল না। মানুষ খাবারের জন্য চরম কষ্ট করছেন।

তিতাসের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক সুরঞ্জিত কুমার দে বলেন, গ্যাস সঞ্চালন লাইনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তিতাসের অধীন আবাসিক গ্রাহক ৪০ হাজার, বাণিজ্য গ্রাহক আছেন ২৫০ ও সিএনজি পাম্প আছে ১৩টি। এর সব কটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। তিনি জানান, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) শম্ভুগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিও গ্যাস পাচ্ছে না।