টানা শৈত্যপ্রবাহের কবলে চুয়াডাঙ্গা, দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ

শীত উপেক্ষা করেই ঘর থেকে বেরিয়েছেন এক দিনমজুর। আজ শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার বোয়ালমারী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

টানা চতুর্থ দিনের মতো চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের লাখো মানুষ। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯১ শতাংশ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার এ জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকালের তুলনায় আজ তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও ঘন কুয়াশা আর আকাশে মেঘ থাকায় এখনো তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তরের হিমালয় থেকে নেমে আসা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। এতে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, নৈশপ্রহরীসহ নিম্ন আয়ের লোকজন। গতকাল রাতে শহরের ফেরিঘাট সড়ক এলাকায় কর্মরত নৈশপ্রহরী মো. বড় বুড়োর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘গ্যালো কদিন রাইত ১০টার পর থিকে এই এলাকায় ডিউটি করাই মুশকিল হয়ে পড়চে। বাসাত আর ঘন কুয়োর (বাতাস আর কুয়াশা) ঠেলায় খুপ কষ্ট হচ্চে। ছিঁড়া কাগজ-টাগজ কুড়ি তাতে আগুন ধরি রাইত পার করতি হচ্চে।’

বড়বাজার মুক্তিযোদ্ধা সুপারমার্কেটের নৈশপ্রহরী আলমাছ হোসেন বলেন, ‘১৫ বচরেরও বেশি সময় ধইরে রাইত পাহারার কাজ করি। আগে অ্যারাম জাড় (শীত) লাইগতো না। কদিন ধরে হাড় কাঁপি দেচ্চে। তারপরও রাইত জাইগে ডিউটি করিত হচ্চে। প্রায়ই শুনি সরকারের পক্ক থেইকে আর বড় বড় লোকেরা গরম কাপুড়, কোম্বল দেচ্চে। আমাগের কতা কারুরই মনে থাকে না।’

শীত উপেক্ষা করেই আজ সকালে ঘর থেকে বেরিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক হাফিজ উদ্দিন। তবে ছুটির দিনের সকালে তেমন যাত্রী নেই বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। কেদারগঞ্জ নতুন বাজার এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে জাড়ের মদ্দিই বাজারে আইচি। বেলা ৯টা পর্যন্ত অ্যাট্টাও প্যাসেন্দার (যাত্রী) পাইনি। গ্যালো কদিন ধইরেই অ্যারাম অবস্তা চলচে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। চলতি মৌসুমে ৫ থেকে ১৩ জানুয়ারি, এই ৯ দিনের মধ্যে ৭ দিনই চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে দুই দিন মাঝারি ও পাঁচ দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল। আজ তাপমাত্রা বাড়লেও এ অঞ্চলে কাল বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। শনিবার থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ১৬ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে শীতার্ত মানুষের মধ্যে সরকারি উদ্যোগে ২১ হাজার নতুন কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চার উপজেলায় দুই লাখ করে আট লাখ টাকার শীতবস্ত্র কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেসরকারিভাবেও বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া সংসদ সদস্যের নামে ১০ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ এসেছে।