পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় সুফিয়া আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। বমি ও পাতলা পায়খানায় (ডায়রিয়া) তাঁর মৃত্যু হয় বলে প্রচার করেছিলেন স্বামী শামসুল আলমসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। লাশ উদ্ধারের প্রায় পাঁচ মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা গেল সুফিয়াকে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর মঙ্গলবার রাতে নিহত সুফিয়ার স্বামী শামসুল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে আটোয়ারী থানা–পুলিশ। আজ বুধবার বিকেলে তাঁকে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।
নিহত সুফিয়া আক্তার পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড় মোমিনপাড়া এলাকার দিনমজুর মো. জাফরুল্লাহর মেয়ে। গ্রেপ্তার শামসুল আলম জেলার আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের সুখ্যাতি-সৌলাপাড়া এলাকার ছুটু মোহাম্মেদের ছেলে।
আদালত, মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩ জুলাই শামসুল আলমের সঙ্গে সুফিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিনের মাথায় স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরে সুফিয়া আক্তার বাবার বাড়িতে চলে যান। পরে পারিবারিক সালিস বৈঠকের মাধ্যমে ৩০ জুলাই স্বামীর বাড়ির লোকজন সুফিয়াকে বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যান। পরে ৬ আগস্ট গভীর রাতে সুফিয়া অসুস্থ বলে স্বামীর বাড়ির লোকজন তাঁর বাবার বাড়ির লোকজনকে জানান। পরদিন সকালে বাবার বাড়ির লোকজন তাঁকে দেখতে যাওয়ার পথে খবর পান সুফিয়া আক্তার বমি-পাতলা পায়খানায় মারা গেছেন।
বিষয়টি বাবার বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হলে তাঁরা আটোয়ারী থানা–পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল করে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এরপর ১৪ আগস্ট নিহত সুফিয়া আক্তারের বাবা বাদী হয়ে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামাতা শামসুল আলমসহ ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে আদালত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
চলতি মাসে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুফিয়া আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ১৫ জানুয়ারি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনসহ অপমৃত্যুর মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন আটোয়ারী থানার উপপরিদর্শক ছাইফুল ইসলাম। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন।
আজ বুধবার বিকেলে আটোয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোয়েল রানা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে আদালতের আদেশ পাওয়া যায়। এরপর অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত শামসুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বিকেলে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জালাল উদ্দিন আহাম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, সুফিয়া আক্তার মারা যাওয়ার সময় তাঁর স্বামীর বাড়ির লোকজন দাবি করেছিল তিনি বমি-পাতলা পায়খানায় মারা গেছেন। বিষয়টি তাঁর বাবার সন্দেহ হলে তিনি আদালতে মামলা করেন। পরে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা গেছে সুফিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটিকে এজাহার হিসেবে নিতে আটোয়ারী থানাকে আদেশ দেন আদালত। সেই মামলায় আটোয়ারী থানা–পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত শামসুল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন বাদীর আইনজীবী।