আসামি ও সাক্ষীর কাঠগড়া ছিল না। সরকারি কৌঁসুলি ও আইনজীবীদের কারও গায়ে ছিল না গাউন। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পরনে ছিল না ইউনিফর্ম। অন্যদিন বিচারক এজলাসে বসলেও এদিন নেমে আসেন নিচে। সংঘাতে জড়িত শিশুদের বসানো হলো বেঞ্চে। এজলাসের নিচে বিচারক ও আইনজীবীরা চেয়ার-টেবিল বসিয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন।
এভাবেই নওগাঁয় প্রথমবারের মতো শিশু আইন অনুযায়ী শিশুবান্ধব পরিবেশে আলাদা এজলাসে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। নওগাঁর আদালত ভবনের চতুর্থ তলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ ও শিশু আদালত-২ নওগাঁর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদারের আদালতে গিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এই চিত্র দেখা যায়।
এভাবে আদালত পরিচালিত হওয়ায় খুশি অভিযুক্ত শিশু, তাদের পরিবার, আইনজীবী ও আদালত–সংশ্লিষ্টরা। এখন থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার এভাবে শিশুদের জন্য আদালত বসবেন।
আদালত সূত্র জানায়, আজ ৩৪টি মামলার শুনানি হয়েছে। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার শুধু শিশুদের মামলার বিচার কার্যক্রম চলবে, যাতে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন খুন, ধর্ষণসহ অন্য মামলার আসামিদের সংস্পর্শে শিশুরা না আসে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ ও শিশু আদালত-২ নওগাঁর বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি মো. মকবুল হোসেন বলেন, নওগাঁয় প্রথম শিশু আইন অনুযায়ী আলাদাভাবে শিশুদের মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন থেকে দাগি অপরাধীদের সঙ্গে শিশুদের বিচারকাজ পরিচালিত হবে না। শিশুবান্ধব পরিবেশে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, শুনানিকালে বিচারক মামলার আসামি প্রতিটি শিশু-কিশোরকে ভবিষ্যতে নতুন করে অপরাধে না জড়াতে উদ্বুদ্ধ করছেন। ভালো হয়ে চলতে কার কী সমস্যা, তা জানার চেষ্টা করেছেন। শিশুদের অভিভাবকদেরও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।
জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোদাদাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইন অনুযায়ী নওগাঁয় প্রথমবারের মতো শিশু আদালত সাজানো হয়েছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এর আগে চট্টগ্রামের একটি আদালতে শিশুবান্ধব পরিবেশে এজলাস বসানো হয়েছিল। ধীরে ধীরে সব শিশু আদালত এভাবে গড়ে তোলা উচিত। এতে শিশুরা দ্রুত সংশোধনের সুযোগ পাবে।
২০২০ সালে আইন সংশোধন করে দেশের সব নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে শিশু আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সংশোধিত শিশু আইনে শিশুদের জন্য আদালত কীভাবে গড়ে উঠবে, তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত দিন কাগজেই সীমাবদ্ধ ছিল এই নিয়ম। বড়দের মতো শিশুদের বিচার হতো আদালতে। আজ নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ প্রথমবারের মতো আইন মেনে আদালত বসানো হয়। এ উপলক্ষে সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয় সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদারের এজলাস।