চার ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মো. আবদুল্লাহ। তাঁকে ঘিরেই সুদিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৯৭ দিন পর আবদুল্লাহর মৃত্যুতে সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে পরিবারের। সেই আক্ষেপ জানিয়ে আবদুল্লাহর ভাই ট্রাকচালক নূর আলম বলেন, ‘অকালেই ভাইটা চলে গেল। আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে গেল। ভাইকে তো আমরা আর ফিরে পাব না। এখন আমাদের চাওয়া, সরকার যেন আমাদের দিকে তাকায়।’
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ। তাঁর বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বন্দরসংলগ্ন বড় আঁচড়া গ্রামে। আবদুল্লাহ রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তাঁর কপালের ঠিক মাঝবরাবর গুলি লাগে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা সেখানে পড়ে থাকার পর প্রথমে তাঁকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার হয়। এরপর তাঁকে যশোরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসায় তাঁর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২২ আগস্ট সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
আজ দুপুরে বড় আঁচড়া গ্রামে আবদুল্লাহদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে ভিড় করেছেন। আবদুল্লাহর মরদেহ তখনো পৌঁছায়নি। মরদেহ ঢাকায় রয়েছে। মা-বাবা–বোন-নিকটাত্মীয়দের প্রায় সবাই মরদেহের সঙ্গে রয়েছেন।
বাড়িতে কথা হয় আবদুল্লাহর ভাবি রোজিনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোরবানি ঈদে বাড়িতে এসে সমবয়সী খালাতো ভাই শাওনের বিয়ের অনুষ্ঠানে নেচে–গেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন আবদুল্লাহ। সবার সঙ্গে কত আনন্দ করেছিলেন! অনুষ্ঠানের সবকিছু ভিডিও করে রেখেছিলেন। সেই আনন্দ–উল্লাসই যে জীবনের শেষ আনন্দ হবে, তা কে জানত!
রোজিনা খাতুন আবদুল্লাহর থাকার ঘরে তাঁর ব্যবহৃত পোশাক দেখাতে দেখাতে বলেন, ‘আবদুল্লাহ খুব ভালো ছেলে ছিল। সবাইকে মাতিয়ে রাখত। এখন এসবই আমাদের স্মৃতি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আবদুল্লাহর স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে আজ বিকেলে তাঁদের বাড়িতে যান। সেখানে আবদুল্লাহর স্বজনেরা হত্যাকাণ্ডেরর বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে পরিবারের কারও কর্মসংস্থান বা আর্থিক সহায়তার দাবি জানান।
উপদেষ্টা তাঁর সঙ্গে থাকা জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলামকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।
আবদুল্লাহর বন্ধু সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমি আর আবদুল্লাহ বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়তাম। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি আমরা মানতে পারছি না।’ তিনি জানান, আগামীকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বেনাপোল বলফিল্ড মাঠে আবদুল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সব মসজিদ, মন্দির, গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এ ছাড়া বোরবার বেনাপোল শহরে শোকমিছিল হবে।