কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ হোসেন ওরফে শফিককে (৩০) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নিহতের ছোট ভাই নুর হাশিম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এজাহারে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায়। ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে আরসার ক্যাম্প কমান্ডার ও বালুখালী ক্যাম্প-৮-এর বি-২৩ ব্লকের বাসিন্দা জোবায়ের আহমদকে। এ ঘটনায় পুলিশ এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার সকালে ওই আশ্রয়শিবিরের বি-১৬ ব্লকের সামনে মোহাম্মদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আশ্রয়শিবিরের বি-৩২ ব্লকের বাসিন্দা ও ক্যাম্প-৮ পশ্চিম অংশের বি ব্লকের প্রধান মাঝি (নেতা) ছিলেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ও মামলার এজাহারনামীয় পাঁচজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে আশ্রয়শিবির ও আশপাশের পাহাড়ি জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন মোহাম্মদ জুবায়ের প্রকাশ বল্লা (২১), জুবায়ের আহমদ প্রকাশ কালা পুতু (৩৪), মো. জুবায়ের প্রকাশ রুবেল (২২), মোহাম্মদ সালাম (১৯) ও মোহাম্মদ আলী প্রকাশ কালা পোয়া (১৭)। সবাই উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৬ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ১০টার দিকে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বি-১৬ ব্লকের মাহমুদ উল্লাহর দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ৫০-৬০ জনের একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে মোহাম্মদকে তুলে নিয়ে পাশের ডিআরসি পুষ্টি কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। তাঁর গলা, বুক, পিঠ ও কোমরে চারটি গুলি লাগে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ২৭ ডিসেম্বর রাতে আশ্রয়শিবিরে তাঁকে দাফন করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ। এরপর রোহিঙ্গা নেতা হত্যার নেপথ্যের কারণ জানা হবে।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গত কয়েক দিনে আরসা সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরে কয়েকজন মাঝিকে বসতঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে কিংবা কুপিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হননি। আশ্রয়শিবিরের অন্তত ৭০০ জন মাঝি আরসার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রাণনাশের হুমকিতে বেশ কয়েকজন মাঝি ইতিমধ্যে আশ্রয়শিবির ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে মাঝি আছেন প্রায় আড়াই হাজার। আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘আরসার আতঙ্কে রোহিঙ্গা মাঝিরা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত চার মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১৬ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আটজন রোহিঙ্গা নেতা ও পাঁচজন আরসার সদস্য। অপর তিনজন সাধারণ রোহিঙ্গা।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) মুখপাত্র ও সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আরসাপ্রধান আতাউল্লাহসহ অনেক আসামি তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের শূন্যরেখায় অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে। কিন্তু সেখানে অভিযান চালানো ঝুঁকিপূর্ণ ও আওতাবহির্ভূত। তবে আশ্রয়শিবিরে আরসার নামে যাঁরা অপকর্ম করছেন, তাঁদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে এপিবিএন।