তৃতীয় মেয়াদে তালুকদার খালেক খুলনার মেয়রের দায়িত্ব নিচ্ছেন কাল

খুলনা সিটি নির্বাচনে বিজয়ের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে তালুকদার আবদুল খালেক। গত জুনে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিজয়ের প্রায় চার মাস পর মেয়রের দায়িত্ব নিচ্ছেন তালুকদার আবদুল খালেক। আগামীকাল বুধবার প্রথম সাধারণ সভার মধ্য দিয়ে তিনি মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তিনি সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

গত ১২ জুন খুলনা সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা শপথ গ্রহণ করেন ৩ জুলাই। কিন্তু আইনি কারণে প্রায় চার মাস পর তাঁদের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। তালুকদার আবদুল খালেক গতবারও খুলনা সিটির মেয়র ছিলেন। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করার আগে তাঁকে মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

প্রতিবার বেশ ঘটা করেই খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত মেয়ররা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জমকালো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়রদের। কিন্তু এ বছর তেমন কোনো আয়োজন থাকছে না। অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই এবার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন মেয়র ও নির্বাচিত কাউন্সিলররা। এর মধ্য দিয়েই নতুন পরিষদের পাঁচ বছরের মেয়াদ গণনা শুরু হবে।

কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম জানান, আগামীকাল বেলা ১১টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে কেসিসির সাধারণ পরিষদের সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভার শুরুতেই মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এরপর সুধীজনদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রথম সভা শেষ হবে। সাধারণ সভায় খুলনা ও বাগেরহাটের সব সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, খুলনা বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ

তৃতীয়বারের মতো খুলনা সিটির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। গতবারও মেয়র ছিলেন। তবে ওই সময় যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এবারও নির্বাচনের আগে নগরবাসীর কাছে ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন এবং নগরের দুর্ভোগগুলো নিরসনই তাঁর বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন খুলনার নাগরিক নেতারা। মেয়রও বলছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সচেষ্ট হবেন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, নগরে অসংখ্য ড্রেন ও সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু সেই কাজে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর সিটি মেয়রকে গুণগত মান বজায় রেখে চলমান কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কয়েক মাস ধরে খুলনা আবর্জনার নগরে পরিণত হয়েছে। সড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা ঠিকমতো অপসারণ করতে হবে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, সিটি মেয়র নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদি তিনি তা বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে নগরের অধিকাংশ দুর্ভোগ নিরসন হবে। নগরের শিববাড়ি মোড়ের পাবলিক হল ভেঙে ফেলার পর থেকে জায়গাটি খালি পড়ে আছে। সেখানে দ্রুত বহুতল পাবলিক হল কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। নগরের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে অসংখ্য বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। প্রায় ১৬ বছর আগে সিটি করপোরেশন এলাকা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে অগ্রগতি হয়নি। এবারের মেয়াদে সিটি মেয়রকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এসব চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে তালুকদার আবদুল খালেক আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। দৌলতপুর বাজার রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মোড় সম্প্রসারণ এবং ২৪টি পুকুর খননের প্রকল্প চলমান রয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর চলমান কাজ দ্রুত সম্পন্ন করবেন। এসব কাজ শেষ হলে নগরে যেমন জলাবদ্ধতা কমে যাবে, তেমনি নগরবাসীর দুর্ভোগও অনেকাংশে লাঘব হবে।