সংসারের সচ্ছলতা ও নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চারজন লিবিয়ায় গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন। অপহরণকারীরা ওই চার শ্রমিকের স্বজনদের মুঠোফোনে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অপহৃত শ্রমিকদের স্বজনেরা।
অপহৃত চার শ্রমিক হলেন সোহান প্রামাণিক (২০), সাগর হোসেন (২৪), নাজিম আলী (৩৬) ও বিদ্যুৎ হোসেন (২৬)। তাঁরা সবাই গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দুই বছর আগে তাঁরা লিবিয়ায় যান। এক সপ্তাহের বেশি আগে তাঁরা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন। ২ জুন নির্যাতনের ভিডিও তাঁদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীরা বাংলাদেশি বলে তাঁদের পরিবারকে জানান অপহৃত শ্রমিকেরা।
ভুক্তভোগী শ্রমিকদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমি বন্ধক, গরু বিক্রি ও ঋণ করে চার লাখ টাকা খরচ করে তাঁরা লিবিয়া যান। গত দুই বছরে গড়ে দুই লাখ টাকা করে পেয়েছে প্রতিটি পরিবার। প্রবাসী সন্তানদের পাঠানো টাকায় ঋণের অর্থ পরিশোধসহ সংসারের সচ্ছলতা আসার অপেক্ষায় ছিল ওই চারটি পরিবার। কিন্তু এরই মধ্যে চার শ্রমিকের নির্যাতনের ভিডিও দেখে এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ায় স্বজনেরা হতভম্ব হয়ে গেছেন।
অপহৃত সোহানের বাবা শাজাহান প্রামাণিক বলেন, গত রোববার তাঁর মুঠোফোনের ইমোতে হঠাৎ করেই একটি কল আসে। অপর প্রান্তে তাঁর ছেলে সোহানের ‘মা বাঁচাও, বাবা বাঁচাও’ বলে চিৎকার শোনা যায়। তখন লিবিয়ায় তাঁর ছেলেকে নির্যাতন করা হচ্ছিল। ১০ লাখ টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলের কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরে সোহানকে একটি কক্ষের মধ্যে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও দেখায় অপহরণকারীরা। সেখানে আরও তিনজনকে দেখা যায়। তবে অপহরণ ও নির্যাতনকারীদের পরিচয় জানতে পারেননি তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাজাহান প্রামাণিক আরও বলেন, এখনো ঋণের টাকা পরিশোধ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ভিটেমাটি বিক্রি করলেও মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য নেই তাঁদের। এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চান।
অপহরণের শিকার নাজিম আলীর গ্রামের বাড়িতে থাকেন স্ত্রী নাদিরা বেগম (৩২), দুই শিশুসন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়ি। প্রবাস থেকে নাজিম আলীর পাঠানো টাকায় ধারদেনা পরিশোধ করা হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নাজিম আলী অপহৃত হলেন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
অপহৃত সাগরের মা ছকেরা বেগম বলেন, অনেক আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। সরকারের নানা প্রকল্পে কাজ করে একমাত্র সন্তানকে বড় করেছেন। ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠান। ঋণ এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। এরই মধ্যে ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে ১০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় সরকার কিছু না করতে পারলে, তাঁর কিডনি বিক্রি করে হলেও ছেলেকে উদ্ধার করতে চান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, লিবিয়ায় জিম্মি থাকা শ্রমিকদের স্বজনদের থানা-পুলিশের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার পর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে অপহরণকারীদের ভয়ে পরিবারগুলো থানায় অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছে। বিষয়টি নাটোরের পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে।