প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকসমাগমের প্রসঙ্গ তুলে তিনি থানায় জিডি করেন।
জিডিতে সংসদ সদস্য উল্লেখ করেন, গতকাল সকাল ১০টায় গোদাগাড়ী উপজেলার মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা ছিল। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ওই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা। বাসা থেকে সভায় যাওয়ার আগে তিনি খবর পান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে দুই থেকে আড়াই হাজার আওয়ামী চেতনাবিরোধী সন্ত্রাসী সমবেত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফোন করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপস্থিত হয়ে তিনি ইউএনওকে লোকসমাগমের বিষয়ে কেউ পূর্বানুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চান। ইউএনও জানান, এ বিষয়ে কেউ তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি।
জিডিতে ওমর ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, উপজেলা চত্বরে আসার পর কয়েকজন সাংবাদিক তাঁকে অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর প্রশ্ন করলে তিনি তাঁদের পেশাদার সাংবাদিকের মতো প্রশ্ন করার অনুরোধ করেন। এ সময় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. বেলাল উদ্দিনের (সোহেল) নেতৃত্বে তাঁরা তাঁর (সংসদ সদস্য) প্রাণনাশের জন্য দুরভিসন্ধি করে সেখানে সমবেত হয়েছেন। অতঃপর তিনি সভা শেষ করে বাসায় ফিরে যান।
জানতে চাইলে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের দিন ছিল। এ জন্য তিনি উপজেলা পরিষদে গিয়েছিলেন। সেখানে সমাবেশ করতে তিনি কাউকে ডাকেননি। আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে সমাবেশ হয়নি। দলীয় যাঁরা তাঁকে ভালোবাসেন, তাঁরা কেউ কেউ নিজ থেকে গিয়েছিলেন। তাঁরা কোনো বিশৃঙ্খলাও করেননি। সাধারণ মানুষের তো উপজেলা পরিষদে স্বাভাবিকভাবেই যাওয়ার অধিকার আছে। দলীয় লোকজন দেখে কীভেবে সংসদ সদস্য জিডি করেছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভার পাশাপাশি নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের দিন ছিল। এবারের নির্বাচনে গোদাগাড়ীতে উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক বেলাল উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন সংসদ সদস্যের পছন্দের প্রার্থী। তিনি তাঁকে মৌন সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে জাহাঙ্গীর হেরে যাওয়ার পর বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন সংসদ সদস্য। গতকাল বেলাল উদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা উপজেলা চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হয়ে লোকসমাগম দেখেই সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘আমাকে হত্যার জন্য এই সমাবেশ করা হয়েছে। এতে ইউএনও ইনভলভ আছে কি না সন্দেহ।’ সেখানে ইউএনও আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্যের ওই মন্তব্যের ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলেননি। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে সংসদ সদস্য তাঁকে বলেন, ‘তুমি সব সময়ই বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন কর, ইট ইস ভেরি ব্যাড।’ সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিকেরা এর প্রতিবাদ জানান। তাঁরা সংসদ সদস্যকে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানালে সংসদ সদস্য পাশ কাটিয়ে মাসিক সভায় যোগ দিতে চলে যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও আতিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, সংসদ সদস্য থানায় একটি জিডি করেছেন। জিডি তদন্তের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেলে পুলিশ রিপোর্ট আকারে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।