রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এই দুই আসনের মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। ফলে দলের শক্ত ঘাঁটি রংপুরে অস্বস্তিতে পড়েছে জাপা। অন্যদিকে দুই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রত্যাহার হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) ও রংপুর-৩ (সদর-সিটির আংশিক) আসনে জাপার প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার আসন দুটিতে শুরুতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত জাপাকে ছেড়ে দিয়েছে। দুটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করা হলেও জেলার ছয়টি আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন।
রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। তাঁকে ছাড় দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন মো. আসাদুজ্জামান। তিনি গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে এই আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য, সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত (মহাসচিব) মসিউর রহমান রাঙ্গাও রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ কারণে আসনটি নিয়ে দলমত–নির্বিশেষে সব মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
এদিকে রেজাউল করিম মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পর দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় নেমেছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, এবার হয়তো প্রার্থী পরিবর্তন কিংবা মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি আসবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন তাঁরা।
রংপুর-৩ (সদর-সিটির আংশিক) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ আসনের সংসদ সদস্য এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ)। তাঁকে এবার দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে জি এম কাদের নির্বাচন করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহারের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। রংপুর-৩ আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল আক্ষেপ করে বলেন, ‘বহু বছর পর এই আসনে নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তা প্রত্যাহার করায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা জন্ম নিয়েছে। কেননা, এরই মধ্যে নেতা-কর্মীরা মাঠে প্রচারণায় নেমেছিলেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার অন্তত আমাদের ধারণা ছিল, রংপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ধারায় অনেক পরিবর্তন আসবে। জাতীয় পার্টির বলয় থেকে মানুষ বেরিয়ে আসবে। কিন্তু রংপুর-১ ও ৩, এই দুই আসনে প্রার্থী প্রত্যাহার হওয়াও সেটি আর হয়ে উঠল না।’
রংপুর বরাবরই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। জেলার ছয়টি আসনেই আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা করছেন দলের নেতারা। জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করছে। আসন সমঝোতা আমাদের কাছে মুখ্য নয়। প্রতিটি আসনেই আমাদের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে লড়ে যাবেন। আমরা অনেক ভালো করব বলে আশা করছি।’
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, রংপুরের ৬টি আসনে ৪৬ জন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে ১০ প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। প্রার্থী থাকলেন ৩৬ জন।