থরে থরে সাজানো মুখরোচক ইফতারসামগ্রী। রোজার প্রথম দিনেই সিলেটে জমজমাট ইফতারির বাজার। শুক্রবার বিকেলে নগরের জিন্দাবাজার এলাকায়
থরে থরে সাজানো মুখরোচক ইফতারসামগ্রী। রোজার প্রথম দিনেই সিলেটে জমজমাট ইফতারির বাজার। শুক্রবার বিকেলে নগরের জিন্দাবাজার এলাকায়

সিলেট

ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে জমজমাট ইফতারির বাজার

ডালায় থরে থরে সাজিয়ে রাখা মুখরোচক নানা খাবার। জিলাপি, বেগুনি, চপ, পেঁয়াজি, বাখরখানিসহ বাহারি পদের ইফতারসামগ্রী। আশপাশে ক্রেতাদের ভিড়। ক্রেতা ও বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর চারপাশ। সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় ইফতারের আগে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বরাবরের মতো রমজানের প্রথম দিনেই সিলেটে জমে উঠেছে ইফতারির বাজার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হোটেল-রেস্তোরাঁর সামনে শামিয়ানা টানিয়ে নানা পদের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। চারদিকে ক্রেতা-বিক্রেতার হইহুল্লোড় আর হাঁকডাক। তবে ক্রেতাদের অনেকে ইফতারসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়ায় ইফতারসামগ্রীতেও প্রভাব পড়েছে।

বিলপাড় এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল ইসলাম (৪৮) নগরের জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে ইফতারসামগ্রী কিনছিলেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাসায় কিছু ইফতারসামগ্রী বানানো হয়। আর বাজার থেকে জিলাপি, বাখরখানিসহ নানা পদ কিনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইফতারসামগ্রীর দাম একটু বেশি।’

নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, উপশহর, সোবহানীঘাট, কদমতলীসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফুটপাতে নানা পদের ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। সবখানেই ক্রেতাদের ভিড়। এর বাইরে খেজুর, মুড়ি, ফলের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় ইফতারির দোকানে ব্যস্ত কারিগররা। ক্রেতাদের জন্য ইফতারি সাজিয়ে রাখছেন এক কারিগর

জিন্দাবাজার এলাকার ‘উঠান’ রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক প্রসেন সূত্রধর বলেন, রোজার প্রথম দিন ক্রেতাদের উপস্থিতি তাঁদের আশাবাদী করেছে। প্রথম দিনের চিত্র দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এবার বেচাকেনা ভালো হবে। একই এলাকার ‘পানসী’ রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আহমদ বলেন, তাঁদের রেস্তোরাঁয় বিফ আখনি, পাতলা খিচুড়ি ও বিফ নেহারি হালিম বেশি বিক্রি হচ্ছে। এই তিন পদ ছাড়া অন্তত ৩৭ ধরনের ইফতারসামগ্রী তাঁরা বিক্রি করছেন।

দোকানিরা জানান, বরাবরের মতো ইফতারসামগ্রীর মধ্যে চিকেন ও বিফ আখনি, পাতলা খিচুড়ি, মাটন ও বিফ হালিম রোজদারদের চাহিদার শীর্ষে আছে। এর বাইরে অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে জিলাপি, বেগুনি, আলু ও ডিমের চপ, পেঁয়াজি, বাখরখানি, ছানা, বিভিন্ন শাকের বড়া, চিকেন টিক্কা, চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোস্ট, কাবাব, রেশমি কাবাব, রোল, বিফ চাপ, বিফ বটি বারবিকিউ, ভুনা খিচুড়ি, ফিশ গ্রিল, চিকেন গ্রিল, চিকেন উইংস, বিফ বটি কাবাব, চিকেন ড্রাম স্টিক, বিরিয়ানি ও তেহারির কদর বেশি।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিলাপি (বড়) প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, জিলাপি (মিডিয়াম) প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৬০, বেগুনি প্রতিটি ১০ থেকে ১২, আলুর চপ প্রতিটি ১৫ থেকে ১৮, ডিমের চপ প্রতিটি ৩০ থেকে ৩৫, পেঁয়াজি প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৭০, বিফ আখনি প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৮০, পাতলা খিচুড়ি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০, মাটন হালিম প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকায় ইফতারি কিনছিলেন আজমল হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিবছরই বাইরে থেকে কয়েক পদের ইফতারি কেনেন। নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় শাক কিনতে আসা আহমদ মিয়া বলেন, ‘আমরা বাইরের ইফতারসামগ্রী কিনি না। বাসাতেই তৈরি করা হয়। শাকসহ ইফতারি তৈরি করার কিছু উপকরণ কিনতেই বাজারে এসেছি।’

ইফতারসামগ্রীর মধ্যে চিকেন ও বিফ আখনি, পাতলা খিচুড়ি, মাটন ও বিফ হালিম রোজদারদের চাহিদার শীর্ষে আছে বলে দোকানিরা জানিয়েছেন

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোজার আগের দিন থেকেই জেলা প্রশাসন বাজার তদারকি শুরু করেছে। নগরে তিনটি ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে দল কাজ করছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। অযথা কেউ ইফতারসামগ্রীর দাম বাড়ালে কিংবা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।