আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে খুলনার রূপসা খেয়াঘাটে আসেন নগরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন নারী শিক্ষক। নদীর ওপারে রূপসা উপজেলার কাজদিয়ায় একটি স্কুলে তাঁদের প্রশিক্ষণ আছে। ছয় দিনের প্রশিক্ষণের আজ ছিল শেষ দিন। সকাল নয়টায় প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও খেয়াঘাট বন্ধ থাকায় ওপারে যেতে পারছিলেন না তাঁরা। বিপাকে পড়ায় প্রশিক্ষণটি এক দিন পেছানোর জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে অনুরোধ করেন তাঁরা। তবে সেটি পেছানো হয়নি। সেখানে কোনো ইজিবাইকও ছিল না। উপায়ান্তর না পেয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে রূপসা সেতুর দিকে হাঁটা শুরু করেন তাঁরা।
খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে বাস, লঞ্চ বন্ধের পর গতকাল শুক্রবার রাত থেকে নগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার রূপসা ও জেলখানা খেয়াঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। নগরের দুটি খেয়াঘাটই রূপসা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত। তবে জেলখানা ঘাট দিয়ে রূপসা ছাড়াও তেরখাদা উপজেলাসহ নড়াইলের দুটি ও বাগেরহাটের একটি উপজেলায় যাওয়া যায়। এই দুই খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পারাপার হন।
আজ সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত খেয়াঘাট দুটিতে অবস্থান করে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতো ঘাটে মানুষ আসছেন। কিন্তু খেয়া পারাপার পুরোপুরি বন্ধ থাকায় কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।
জেলখানা ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফেরি বন্ধ। ঘাটে যাওয়ার পথটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন যুবক। পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। যাঁরা ওই খেয়াঘাটে আসছেন, তাঁদেরই ফেরত পাঠাচ্ছেন রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকেরা।
জেলখানা ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে যাওয়ার পথটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন যুবক। পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। যাঁরা ওই খেয়াঘাটে আসছেন, তাঁদেরই ফেরত পাঠাচ্ছেন রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকেরা।
পঞ্চগড় থেকে ট্রেনে করে খুলনায় এসেছেন ১০ জন নির্মাণশ্রমিক। ট্রেন থেকে নেমে রূপসা খেয়াঘাটে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু নদী পার হতে না পারায় কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। বারবার মুঠোফোনে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে ট্রেন থেকে নেমে রূপসা খেয়াঘাটে আসতে। কিন্তু এখানে এসে দেখছি খেয়া পারাপার বন্ধ। ঠিকাদারকে ফোন দিয়েছি। তিনি আমাদের নেওয়ার জন্য লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।’
খুলনা নগরের ডাকবাংলো এলাকায় চলছে বিএনপির গণসমাবেশ। বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ওই সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। সমাবেশকে ঘিরে আগের দিন শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাত্রীবাহী বাস ও নৌযান চলাচল। আর গতকাল রাতে বন্ধ করা হয় খুলনা নগরে প্রবেশের প্রধান দুই খেয়াঘাট।
এমন পরিস্থিতেতে আজ সকাল থেকে খুলনা নগরে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সিএনজি, ইজিবাইক, রিকশাও কম চলতে দেখা যাচ্ছে। এতে সমাবেশে আসা মানুষ ও বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে ব্যস্ত দুই খেয়াঘাট বন্ধ থাকায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে মানুষের। রূপসা ও সোনাডাঙ্গা এলাকায় লাঠিসোঁটা হাতে যানবাহন চলাচলে বাধা দিতে দেখা গেছে একদল যুবককে। যে অল্প কিছু যানবাহন চলছে, তাতে চড়তে ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি।
ভোগান্তিতে পড়া মানুষের অভিযোগ, সমাবেশ করছে বিএনপি আর কষ্ট পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে কষ্ট করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
আজ সকাল নয়টার দিকে নগরের শিববাড়ী মোড় থেকে অফিসের কাজে দৌলতপুরে যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজছিলেন শাহিন ইকবাল। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যানবাহন না পেয়ে ক্ষুব্ধ তিনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসের কাজে ১০টার মধ্যে দৌলতপুরে যাওয়াটা খুবই দরকার। কিন্তু যাওয়ার কোনো পথ পাচ্ছি না। যে দু–একটি ইজিবাইক আসছে, তাতে যাত্রী ভর্তি। মনে হচ্ছে, পায়ে হেঁটেই দৌলতপুর যেতে হবে।’
সোনাডাঙ্গা এলাকায় কথা হয় সবুজ হোসেন নামের এক ইজিবাইকচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যানবাহন কম, যাত্রীর চাপ বেশি। অন্যদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিচ্ছেন। এ কারণে ভয়ে অনেকে ইজিবাইক বের করছেন না।’