হিমাগারে আলু রাখতে আসা ট্রাকের সারি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকায় আলু নষ্টের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সোমবার ফরিদপুর হিমাগারের সামনে
হিমাগারে আলু রাখতে আসা ট্রাকের সারি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকায় আলু নষ্টের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সোমবার ফরিদপুর হিমাগারের সামনে

ফরিদপুরে হিমাগারে আলু রাখতে এসে ভোগান্তিতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা

একটার পর একটা আলুভর্তি যানবাহন ভিড়ছে হিমাগারের সামনে। একটি ট্রাক থেকে আলু নামাতে নামাতে আরেকটি এসে ভিড়ছে। সবার উদ্দেশ্য, হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা। ফরিদপুরের একমাত্র হিমাগারে আলু রাখতে এসে বিপাকে পড়েছেন দূরদূরান্তের ব্যবসায়ী-কৃষকেরা। ট্রাকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেও অনেকে আলু রাখতে না পারায় আলু নষ্ট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, অধিক ফলন ও একই সঙ্গে সবাই আলু নিয়ে আসায় বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। দেড় লাখ বস্তার ধারণক্ষমতার হিমাগারে ইতিমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি বস্তা আলু হিমাগারে ঢুকেছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

ফরিদপুর হিমাগারটি শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে গোয়ালচামট এলাকায় অবস্থিত। ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘ফরিদপুর হিমাগার লিমিটেড’ ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। হিমাগারটিতে ৬০ কেজি ওজনের আলুর বস্তায় দেড় লাখ বস্তা রাখা যায়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি ৪০৫ টাকা হারে ভাড়া দেন।

হিমাগার সূত্রে জানা গেছে, হিমাগারে আলু রাখতে প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বুকিং দিতে হয়। আলু রাখা শুরু হয় মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। হিমাগারে মূলত ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা আলু সংরক্ষণ করেন। আলুর পাশাপাশি সারা বছর স্বল্প সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল সংরক্ষণ করেন ব্যবসায়ীরা।

গত সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, হিমাগারের ফটকের সামনে ট্রাক্টর, ভটভটি, ভ্যান, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে আলু নিয়ে এসেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা হিমাগারের সামনে দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ তিন দিন, কেউ আবার পাঁচ দিন ধরে হিমাগার ফটকের বাইরের রাস্তায় অপেক্ষা করছেন।

আগত ব্যক্তিদের অধিকাংশই এসেছেন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে। চলতি বছর বুকিং দিয়েও আলু রাখতে না পারার অভিযোগ করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। প্রচণ্ড গরমে ট্রাকভর্তি আলু নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকায় আলু নষ্টের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আলু রাখতে লালমনিরহাট থেকে এসেছেন আবেদ আলী। তিনি বলেন, চার দিন আগে তিনি ১২ টন আলু নিয়ে ফরিদপুরে এসেছেন। অপেক্ষা করতে করতে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এখন ভয় পাচ্ছেন, প্রচণ্ড গরমে ট্রাকে রাখা আলুতে পচন না ধরে যায়।

ফরিদপুর হিমাগারের ব্যবস্থাপক রুস্তম মোল্লা বলেন, ‘আমাদের আনলোডের শ্রমিকসংখ্যা কম, যে কারণে দূর থেকে আসা ট্রাকগুলো থেকে আমরা পর্যাপ্ত আলু আনলোড করতে পারছি না। তবে আশা করছি, আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে।’