‘স্বপ্নের ট্রেন যাবে লোহাগড়ার বুক চিরে, তবে আমাদের স্বপ্ন অধরাই কেন রবে?’ এই স্লোগান নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়া স্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা তাঁদের নিজ নিজ দলের ব্যানার নিয়ে এই দাবিতে মিছিল করে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সামনে ঢাকা-যশোর মহাসড়কে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। এই কর্মসূচিতে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষও যোগ দেন।
কর্মসূচির উদ্যোক্তারা বলেন, তাঁরা শুনছেন ১৫ নভেম্বর থেকে ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এতে ঢাকা-নড়াইল-যশোর-খুলনা হয়ে ট্রেন যাতায়াত করবে। তবে লোহাগড়ায় রেলস্টেশন তৈরি হলেও সেখানে থামবে না। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মাঠে নেমেছেন। তাঁরা লোহাগড়ায় ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানাচ্ছেন।
বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আহাদুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান, পৌর বিএনপির সভাপতি মিলু শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মশিয়ার রহমান, উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মো. জামিরুল হক ও পৌর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ ইমরান হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, লোহাগড়া স্টেশনে প্রতিটি ট্রেন থামাতে হবে। এ স্টেশন থেকে ট্রেনে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ থাকতে হবে। নইলে লোহাগড়ার বুকের ওপর দিয়ে ট্রেন চলতে দেওয়া হবে না।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আহাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোহাগড়া উপজেলায় তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করে রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। লোহাগড়ায় রেলস্টেশনও তৈরি হয়েছে। সেখানে ট্রেন থামবে না, সেটা হতে পারে না। লোহাগড়া স্টেশনে ট্রেনে যাত্রী ওঠানামার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নইলে এই দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
লোহাগড়া বাজারের ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫০ বছর ধরে অপেক্ষা করছি যে ট্রেনে ঢাকা-যশোর যাতায়াত করব। লোহাগড়ায় চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী অন্যান্য এলাকার থেকে বেশি। অল্প সময়ে ও অল্প খরচে ট্রেনে যাতায়াত সুবিধা। এটা থেকে আমরা যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হই।’
লোহাগড়া কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা মাসুম বিল্লাহ, লোহাগড়া কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সৈয়দ জিহাদ আলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ লোহাগড়া স্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পদ্মা সেতু রেল–সংযোগ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু ইউছুফ মো. শামীম প্রথম আলোকে জানান, আগামী ১৫ থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন ঢাকা থেকে নড়াইল হয়ে দক্ষিণবঙ্গে ট্রেন চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারিখ এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। তবে কোন কোন স্টেশনে ট্রেন থামবে, তা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে ট্রেনের পরিচালক (ট্রাফিক) মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া যাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু রেল–সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হচ্ছে। ঢাকা থেকে লোহাগড়া রেলস্টেশনের দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার ও নড়াইলের দূরত্ব ১৩৮ কিলোমিটার।
রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, ঢাকা-যশোর রেলপথের ভাঙ্গা পর্যন্ত ইতিমধ্যে ট্রেন চলাচল করছে। প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৮৬ কিলোমিটার। প্রকল্পটি শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটি অনুমোদন হয়। অনুমোদনের সময়ে পুরো প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক)।