ক্রেতা কম বলে ৩০ টাকা কেজি দামে মাল্টা বিক্রি করছেন জয়নাল আবেদীন নামে এক বিক্রেতা। পর্যটক না আসায় বিক্রি হচ্ছে না তাঁর মাল্টা। ছবিটি খাগড়াছড়ি বাজার থেকে শুক্রবার সকালে তোলা
ক্রেতা কম বলে ৩০ টাকা কেজি দামে মাল্টা বিক্রি করছেন জয়নাল আবেদীন নামে এক বিক্রেতা। পর্যটক না আসায় বিক্রি হচ্ছে না তাঁর মাল্টা। ছবিটি খাগড়াছড়ি বাজার থেকে শুক্রবার সকালে তোলা

খাগড়াছড়ি

মাল্টার ক্রেতা নেই, প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি

খাগড়াছড়ির সবুজ মাল্টার খ্যাতি দেশজুড়ে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মাল্টার ফলন হয়েছে অনেক। কিন্তু ক্রেতার অভাবে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না মাল্টাচাষিরা। বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত পড়েছে।

গতকাল বুধবার খাগড়াছড়ির বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে বাজারে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। এই দামেও ক্রেতা মিলছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। দুবার ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পর থেকে মাল্টার দাম কমে গেছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়িদের বিভিন্ন বাজার বর্জন, পর্যটক ও বাইরে থেকে ফল ব্যবসায়ীরা না আসার কারণে দাম পাচ্ছেন না বাগানিরা।

ভ্যান গাড়িতে মাল্টা বিক্রি করেন জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, ১১ বছর ধরে তিনি গ্রাম থেকে বিভিন্ন মৌসুমি ফল নিয়ে এসে ভ্যানে করে বিক্রি করেন। তবে এ বছরের মতো এত কম দামে কখনো মাল্টা বিক্রি করেননি। তারপরও ক্রেতা নেই। এমনও দিন গেছে, সারা দিনে ৫ কেজি মাল্টাও বিক্রি হয়নি। অথচ গত বছর এই সময়ে প্রতিদিন তিনি ২০০ থেকে ৩০০ কেজি সবুজ মাল্টা বিক্রি করেছেন।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে জানা যায়, খাগড়াছড়িতে ২০২১-২২ অর্থবছরে মাল্টা চাষ হয়েছে ৫২৫ হেক্টর জমিতে। মাল্টা উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাল্টা চাষ হয়েছে ৬৮০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ৭২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন।

পানছড়ি নাপিতাপাড়া এলাকার মাল্টাচাষি অশোক কুমার চাকমা বলেন, ‘বাড়ির চারপাশে ৬৫টি মাল্টাগাছ লাগিয়েছিলাম ৮ বছর আগে। প্রতিবছর ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে মাল্টা বিক্রি করতে পারি। এ বছর বিক্রি করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। বাজারে নিয়ে গেলে অনেক সময় গাড়িভাড়াও ওঠে না।’

মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটা মাল্টাবাগান কিনেছিলাম। বাগানের অর্ধেক মাল্টা বিক্রি করেছি। কিন্তু ৩৫ হাজার টাকাও ওঠেনি। লাভ দূরের কথা, এ রকম চললে খরচও উঠবে না। গাড়িভাড়া খরচ করে মাল্টা বাজারে নিয়ে এলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি হয় না।’

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, খাগড়াছড়ির মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ কারণে এই এলাকায় প্রচুর মাল্টা চাষ হয়। তবে পরিস্থিতির কারণে এ বছর চাষিরা মাল্টার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। চাষি ও ব্যবসায়ী—উভয়েই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এতে।