শ্রমিকদের ভীতি কাটাতে বিনোদনের ব্যবস্থা ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় এল এসকোয়্যার কারখানায়
শ্রমিকদের ভীতি কাটাতে বিনোদনের ব্যবস্থা ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় এল এসকোয়্যার কারখানায়

ভালুকার সেই কারখানায় শ্রমিকেরা অসুস্থ হচ্ছেন ‘অক্সিজেন–স্বল্পতায়’, তদন্ত কমিটির ২০ সুপারিশ

ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় এল এসকোয়্যার লিমিটেড পোশাক কারখানায় অক্সিজেন–স্বল্পতার কারণে শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পাঁচ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আজ রোববার জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়। তদন্তে কারখানার নানা ত্রুটি উঠে এসেছে। উপযুক্ত কর্মপরিশে তৈরি করতে ২০টি সুপারিশ দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

গত বৃহস্পতিবার কারখানাটিতে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকেরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। একে একে অন্তত ৭০ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সে সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসানুল হোসাইন জানান, গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে শ্রমিকেরা আক্রান্ত হন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকার পর গতকাল শনিবার কারখানায় কাজে যোগ দিতে গেলে পুনরায় শ্রমিকেরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। এদিন অন্তত ১৮১ শ্রমিক কারখানাটির মেডিকেল ক্যাম্প থেকে চিকিৎসা নেন। আজ আরও চারজন শ্রমিক অসুস্থ হন। এর আগে গত ৩১ আগস্ট এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরদিন মারা যান।

তদন্ত কমিটির প্রধান ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলীনূর খান বলেন, তদন্তে সবচেয়ে যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা হলো কর্মকক্ষগুলোতে অক্সিজেনের স্বল্পতা। এ ছাড়া বড় কোনো বিষয় পাওয়া যায়নি। রোগীদের বিশদভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাও সম্ভব হয়নি। অক্সিজেন–স্বল্পতাসহ বেশ কিছু ত্রুটি পাওয়া যায়। ২০টি সুপারিশও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কারখানার কর্মপরিবেশ, কর্মকক্ষে বাতাসের প্রবাহ ও বায়ুর মান, তাপমাত্রা ইত্যাদি উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিরীক্ষা করে ‘সেফ ওয়ার্ক প্লেস সার্টিফিকেট’ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার শ্রমিক অসুস্থ হলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল কারখানা পরিদর্শন করে। তাদের তদন্তেও উঠে আসে কারখানার অবকাঠামোগত ত্রুটি ও বায়ু চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি। সে জন্য ১০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে আজ সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে অনেকে অস্বস্তি বোধ শুরু করেন। তবে শনিবারও শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়নি। শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি কাটাতে কারখানার প্রতিটি তলায় গানবাজনার আয়োজন করে মালিকপক্ষ। প্রতিটি কক্ষে গিয়ে শ্রমিকদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হয়। কারখানার অন্তত তিনজন শ্রমিক জানান, রোববার দিনভর নাচগানে কাটিয়েছেন শ্রমিকেরা। কিছুক্ষণ পরপর লোকজন এসে নানাভাবে ভয় কাটানোর চেষ্টা করেন।

এল এসকোয়্যার লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে চারজন শ্রমিক অসুস্থ হলে তাঁদের কারখানার চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কাউকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়নি। দিনভর কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের আনন্দ দিতে গানবাজনার ব্যবস্থা করা হয়। দলে দলে ভাগ করে শ্রমিকদের মোটিভেশন করা হয়। শ্রমিকদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে মনোবিদও এসেছিলেন। শ্রমিকেরা সবাই সুস্থ আছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটি ও কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যেসব সুপারিশ করেছে, তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।

ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো না মানলে পরবর্তীকালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।