নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল তরুণ-যুবকের বিরুদ্ধে। এ সময় মারধর করা হয় প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়াকে রক্ষা করতে আসা শিক্ষার্থীদেরও। হামলায় কমপক্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে আনুমানিক ১টা পর্যন্ত উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের আবিরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন স্কুলে এসব ঘটনা ঘটে। ওই সময় বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা চলছিল।
বিদ্যানিকেতন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফজুর রহমান ভূঁইয়ার স্ত্রী (একটি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক) রাবেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে এলাকার কিছু লোক নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে বলে নানা রকম হুমকি দিচ্ছিলেন। আজ তাঁর স্বামী বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে শতাধিক তরুণ ও যুবক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে ঢোকেন। তাঁর স্বামীকে মারধর করে লিখিত পদত্যাগপত্রে এবং দুইটি সাদা কাগজে সই আদায় করে নেন।
রাবেয়া বেগম অভিযোগ করেন, হামলা ও পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের ইন্ধনে ওই হামলা ও পদত্যাগপত্র নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি সোনাইমুড়ী থানায় এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে ঘটনা অবহিত করেন। কিন্তু তাঁরা কেউ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার ঘটনাটি যখন শুনেছেন, তখন পুলিশ অন্য ডিউটিতে থাকায় বিদ্যালয়ে যেতে কিছুটা দেরি হয়। তবে প্রধান শিক্ষক এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের দিকে একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন করে প্রধান শিক্ষক হামলার কথা জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই আদায় করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তখন তিনি তাঁকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ইউএনও জানান, গতকাল মঙ্গলবার একদল লোক তাঁর দপ্তরে এসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত একটি অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তাঁদের বলেছেন। আর আজ তাঁরা (অভিযোগকারী) নিজেরাই ব্যবস্থা নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না। বিএনপি কিংবা সহযোগী সংগঠনের কেউ যদি ওই ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপর দিকে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. হানিফ মোল্লা বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে জামায়াতের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। এটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের বিষয়। এখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জামায়াতের নাম জড়ানো হচ্ছে।