বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা অবশ্য বলছেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্রে করেই এই সিদ্ধান্ত।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কদিন আগে হঠাৎই স্থগিত করা হলো বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম। গত সোমবার বাগেরহাট জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসী আশরাফি স্বাক্ষরিত এক আদেশে যুবলীগের ফকিরহাট উপজেলা শাখার সব কার্যক্রম স্থগিতের ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্থগিত হওয়া ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শেখ ওয়াহিদুজ্জামান (বাবু) অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন নির্দেশনা হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফকিরহাটের কমিটি স্থগিতের খবর তিনি জেনেছেন বলে জানান।
জেলা যুবলীগের আদেশে বলা হয়েছে, জেলা শাখার সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় বিধিমালার ২২ (ঘ) ধারা মোতাবেক ফকিরহাট উপজেলা শাখার সব কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
গঠনতন্ত্রের ২২ (ঘ) ধারায় বলা আছে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের অধস্তন কোনো শাখায় স্থবিরতা দেখা দিলে, সাংগঠনিক অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে অথবা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অধিকাংশ নেতা–কর্মী সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে অথবা নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় অনিয়মসংক্রান্ত অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে জেলা শাখা কেন্দ্রের অনুমতিক্রমে থানা শাখার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে পারবে। এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শাখা তাদের অপরাধ সম্পর্কে অনুশোচনা প্রকাশ এবং পুনরাবৃত্তি না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করলে স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করা যাবে, অন্যথায় গঠনতন্ত্রের ২৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট শাখার কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে পারবে।
তবে ফকিরহাট উপজেলা কমিটি স্থগিত করার ক্ষেত্রে ২২ (ঘ) ধারার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা অবশ্য বলছেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্রে করেই এই সিদ্ধান্ত।
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শেখ ওয়াহিদুজ্জামান প্রার্থী হয়েছেন।
নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাসের বিরুদ্ধে যুবলীগের আহ্বায়ক যুবলীগের প্রার্থী হওয়ায় কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
তবে জানতে চাইলে স্বপন কুমার দাস গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই প্রার্থী ও তাঁর অনুসারীরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক কটূক্তিসহ দলের নেতাদের অসম্মান করে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন ও কিশোর গ্যাংকে মদদ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠন হয়তো ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
কমিটি স্থগিতের বিষয়টি একইভাবে দেখছেন স্থগিত হওয়া কমিটির আহ্বায়ক শেখ ওয়াহিদুজ্জামানও। গতকাল সন্ধায় তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইউনিয়ন থেকে উপজেলা কমিটির দায়িত্ব পালন করেছি। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, তারপর যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পাই। দলের দুঃসময়ে হামলা–মামলা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে কাজ করেছি। ২০০১-০৭ সালে উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে পতাকা তুলতে আসার লোক ছিল না। তখনো মাঠে থেকেছি। কিন্তু কেন এখন হটাৎ এমন সিদ্ধান্ত, বুঝতে পারছি না।’
শেখ ওয়াহিদুজ্জামান আরও বলেন, ‘যেহেতু প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। দলীয় কোনো প্রার্থী নেই, তাই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করেই আমি প্রার্থী হয়েছি। উপজেলায় সংগঠনের কোনো স্থবিরতা, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও নেই। আমার সন্দেহ, উপজেলা নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, তিনি হয়তো কোনো কর্নারে আমার সম্পর্কে ভুল বুঝিয়েছেন বা তথ্য দিয়েছেন, যার কারণে এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে।’
উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ফকিরহাটের বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান বাবু ছাড়াও ফজিলা বেগম নামের এক নারী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বপন দাস ও ওয়াহিদুজ্জামানের মধ্যে।