ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীতে অপহরণের শিকার ১৫ জেলের মধ্যে ৯ জনকে তাঁদের পরিবার মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে এনেছে। বাকিরা কী অবস্থায় আছেন, তা কেউ বলতে পারছেন না।
উদ্ধার জেলে ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা জানান, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জেলেদের পরিবার জনপ্রতি ৩০–৪০ হাজার টাকা পাঠানোর পর তজুমদ্দিনের ৯ জেলেকে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদুর রহমান মুরাদ ৯ জেলের মুক্তি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানান, জেলেদের দেওয়া তথ্যমতে তাঁরা ডাকাতদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছেন।
একই সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত মেঘনা নদীর মাঝে জেগে ওঠা চর জহিরউদ্দিন ও চর মোজাম্মল এলাকার কাছে নদীতে ১৫টি মাছ ধরার ট্রলার ডাকাতের কবলে পরে। ডাকাতেরা ট্রলারে হামলা চালিয়ে, জেলেদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে শতাধিক জেলেকে নদীতে ফেলে দেয়। এ সময় ট্রলারের জাল, মাছ, মুঠোফোন ও নগদ টাকা লুট করে নেয় ডাকাতেরা। সেই সঙ্গে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে নিয়ে যায় ১৫ ট্রলারের ১৫ জন জেলেকে। প্রত্যেকের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে ডাকাতেরা।
মুক্তিপণ পাঠানোর পরে ওই ৯ জেলেকে শুক্রবার রাতে ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি পূর্ব মেঘনার মাঝে জেগে ওঠা চরে ফেলে যায় ডাকাতেরা।
অপহরণের শিকার জেলেদের মধ্যে তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট, চৌমহনী ও বাগেরখাল মাছঘাটের নয়জন রয়েছেন। বাকিরা অন্য এলাকার। উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন—সিরাজ মেম্বারের আড়তের আবদুল হান্নান মাঝি, মহিউদ্দিন পোদ্দারের আড়তের মো. লোকমান মাঝি, আমিন মহাজনের আড়তের মিরাজুল ইসলাম মাঝি, বাবুল মীরের আড়তের আবুল হাশেম মাঝি, মনির তালুকদারের আড়তের আরিফুর রহমান মাঝি, মিজান দালালের আড়তের মো. আলাউদ্দিন মাঝি ও হাসান মাঝি, নূরনবী দালালের আড়তের সালাউদ্দিন মাঝি এবং আলাউদ্দিন দালালের আড়তের ইউসুফ মাঝি।
আড়তদার ও উদ্ধার জেলেরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের বেধড়ক পিটিয়ে ডাকাতেরা হাত-পা বেঁধে, না খাইয়ে ট্রলারের খোরলে অন্ধকার কক্ষে ফেলে রাখে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে ডাকাতদের মুক্তিপণ বিনিময় চুক্তি হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চুক্তি মোতাবেক কেউ দিয়েছেন ৩০ হাজার, কেউ দিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। মুক্তিপণ পাঠানোর পরে তাঁদের শুক্রবার রাতে ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি পূর্ব মেঘনার মাঝে জেগে ওঠা চরে ফেলে যায় ডাকাতেরা। জেলেরা সেখান থেকে স্থানীয় মানুষজনের সহযোগিতায় আজ শনিবার ভোররাতে বাড়িতে ফিরে আসেন।
আড়তদারেরা জানান, অপহরণকারীদের মধ্যে রফিক মাঝি, পিচ্চি রুবেল, মো. শাহিন ও মো. নীরব নামের চারজন তাঁদের সঙ্গে মুক্তিপণের জন্য যোগাযোগ করেছেন। জেলে পরিবারগুলো ০১৮৭৭২৪৪৬৮৮, ০১৭৯১৬৬৯৯৯৫, ০১৭৫৮১১২৯৫৮, ০১৩১৫৩৯৪৬৫৯ এই চার মুঠোফোন নম্বরে মুক্তিপণের টাকা পাঠিয়েছে।