মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাওহীদ সন্ন্যামাত (২১) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাদারীপুরের চার সাবেক সংসদ সদস্যসহ (এমপি) আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব কামরুল হাসান মামলাটি করেন। মামলায় ৯২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাত সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
ওই চার সাবেক সংসদ সদস্য হলেন শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুস সোবহান গোলাপ ও নূর-ই আলম চৌধুরী। এ ছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান, সাবেক চেয়ারম্যান ও শাজাহান খানের ভাই ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মোস্তফাপুর গোল চত্বর থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। খাগদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে তাঁদের লক্ষ্য করে হামলা চালান যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই সময় আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলিও ছোড়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তাওহীদ ও রোমান নামের দুজন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় গত শনিবার রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে ৩০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। তবে সেই মামলায় শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ কোনো নেতা আসামি ছিলেন না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা এই হত্যায় জড়িত বলে বাদী উল্লেখ করেন। এরপর গতকাল মধ্যরাতে সংক্ষুব্ধ হয়ে কামরুল হাসান নামের ওই ব্যক্তি আরেকটি মামলা করেন। ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় মাদারীপুরে এ নিয়ে দুটি মামলা হয়েছে।
রাজনৈতিক কারণে এসব মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মামলাটির অন্যতম আসামি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা। আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো ছাড়া আর কিছু বলার ভাষা নেই।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাতকে হত্যার ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হয়ে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। মামলাটি তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।