এক দশক আগে রাজশাহীর পবা উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে ভূমিসেবার অনন্য উদ্যোগ ‘মাটির মায়া’ চালু করা হয়েছিল। এবার ভূমি ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে সেখানে ভূমির পাঠশালার যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পবার একটি গ্রামের বিভিন্ন পেশার ২০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পাঠশালার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ফিতা কেটে ওই পাঠশালার উদ্বোধন করেন। তবে গত রোববার সেখানে পাঠদান শুরু হয়।
মাটির মায়ার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে ভূমিসংক্রান্ত সামগ্রিক জ্ঞান দেওয়ার মাধ্যমে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এ জন্য তিনি উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামকে বেছে নিয়েছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সুপারিশ অনুযায়ী গ্রামের পাঁচ শিক্ষিত তরুণ, পাঁচ তরুণী, মসজিদের ইমাম, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ২০ জনের একটি দল গঠন করা হয়েছে। সপ্তাহের এক দিন তিন ঘণ্টা করে তাঁদের ভূমি ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়—নামজারির আবেদনপ্রক্রিয়া, ভূমি করের নিবন্ধন, কর প্রদানের প্রক্রিয়া ও সরকারি স্বার্থযুক্ত বিষয়ে হাতে-কলমে শেখানো হবে।
পাঠশালার উদ্বোধন উপলক্ষে আজ পবা উপজেলা ভূমি কার্যালয় চত্বরে ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়। ‘স্মার্ট ভূমিসেবা নিশ্চিতে স্মার্ট নাগরিক সৃষ্টির একমাত্র উপায়’ শিরোনামে উপজেলার দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়। বিতর্ক দল তৈরির জন্য সহকারী কমিশনার অভিজিত সরকার আগেই দুটি বিদ্যালয়ে গিয়ে স্মার্ট ভূমিসেবার ওপরে পাঠদান করেন। সেই প্রস্তুতি নিয়ে প্রস্তাবনার পক্ষে নওহাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও বিপক্ষে দামকুড়াহাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরকার অসীম কুমার, সাংবাদিক আকবারুল হাসান ও আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। ভূমি সেবাগ্রহীতারা শিক্ষার্থীদের বিতর্ক উপভোগ করেন।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রস্তাবনার পক্ষের দল নওহাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় জয়ী হয়। ভূমির পাঠশালায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ভূমিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীরা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের হাত থেকে পুরস্কার নেয়।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমরা সৃজনশীল কাজের স্বপ্ন দেখছি। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, ভূমি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টির শুরু থেকে। দেশের অধিকাংশ পরিবারেই ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা আছে। ভূমি নিয়ে মানুষের জ্ঞানচর্চা সবচেয়ে কম। তাই ভূমির পাঠশালা ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে ভূমিবিষয়ক জ্ঞান দেওয়ার মাধ্যমে স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলবে ভূমির পাঠশালা।
পবা ভূমি কার্যালয়ের সেবার দৃষ্টান্ত নিয়ে ‘এসি ল্যান্ডের মাটির মায়া’ শিরোনামে ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম আলোতে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সারা দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের অনুলিপিসহ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, পবা উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের আদলে সব ভূমি কার্যালয়ে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্যোগ বাস্তবায়নের সময়কালও বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর সারা দেশে ভূমিসেবা নিয়ে একটি আন্দোলন তৈরি হয়।
২০১৯ সালে ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলো শাহাদত হোসেনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে ‘মাটির মায়া’ শিরোনামে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে। তখন সারা দেশে এ নিয়ে জাগরণ তৈরি হয়।