র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু

সেই কর্মকর্তা বললেন, ‘মেয়েটি হ্যাকারের ফাঁদে পড়েছিল’

সুলতানা জেসমিন
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সেই পরিচালক এনামুল হক বললেন, ‘মেয়েটি হ্যাকারের ফাঁদে পড়েছিল। তার মৃত্যুতে আমি শকড।’ র‍্যাবের হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুতে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

এনামুল হক গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় নিহত সুলতানার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছিলেন। তার আগের দিন বুধবার তাঁর সামনেই সুলতানাকে আটক করে র‍্যাব। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার সকালে রাজশাহীতে তাঁর মৃত্যু হয়।

ফেসবুক আইডি হ্যাক করে তাঁর ছবি ও পদবি ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এনামুল হক ওই মামলা করেন। তাঁর দায়ের করা মামলায় ১ নম্বর আসামি চাঁদপুরের হাইমচরের বাসিন্দা আল আমিন। আর সুলতানা জেসমিনকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে এনামুল হক উল্লেখ করেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় তিনি জানতে পারেন, আসামিরা তাঁর পরিচয় ও পদবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে সুনাম ক্ষুণ্নসহ সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন তিনি।

মামলার পর থেকে মুঠোফোনে এনামুল হককে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়। তাঁর একটি সভা ছিল। সেখানে যাওয়ার জন্য অল্প কথায় সুলতানাকে আটক, মামলা ও মৃত্যুর ব্যাপারে কথা বলেন তিনি।

র‍্যাবের অভিযাগের আগে থানায় মামলা করলেন না কেন, জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, তিনি র‍্যাবের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। অবশ্য মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, দাপ্তরিক কাজে নওগাঁ যাওয়ার সময় তিনি র‍্যাবের টহল দলের দেখা পেয়ে সমস্যাটি খুলে বলেন। তখন র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাঁকে সঙ্গে করে অভিযান চালিয়ে সুলতানাকে আটক করা হয়।

সুলতানা সরকারি কর্মচারী, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেত কি না, জানতে চাইলে এনামুল বলেন, এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, মামলার প্রধান আসামি আল আমিন তাঁর (এনামুল) পরিচয় ও পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু তিনি ওই টাকা নিজের ব্যাংক হিসাব নম্বরে নেননি। তিনি সুলতানার ব্যাংক হিসাব নম্বর ব্যবহার করেছেন। ওই ব্যাংক হিসাবেই সুলতানার সরকারি চাকরির বেতন জমা হতো।

এনামুল হক বলেন, ওই নারীর বোধ হয় এসব বিষয়ে অতটা জ্ঞান ছিল না। তাঁকে যখন এই টাকা লেনদেনের প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তিনি তাঁর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিষয়টি জানাতে পারত। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি আরও বলেন, ওই ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রতারণা করে প্রায় ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবরণী নিয়ে এটা নিশ্চিত হয়েছে র‍্যাব।

এনামুল হক বলেন, তাঁর নাম-পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণার বিষয়টি প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি। তাঁর কার্যালয়ের এক কর্মচারী প্রথমে বিষয়টি তাঁর নজরে আনেন। সুলতানার মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, ওই নারীর মৃত্যুতে তিনি খুব ‘শকড’। তিনি চাননি ওই নারী এভাবে মারা যান। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এটা তিনি ভাবেননি। ওই নারীর মৃত্যুতে খারাপ লাগছে তাঁর।

এদিকে সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আজ বিকেল পর্যন্ত প্রস্তুত হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন বলেন, তাঁরা প্যাথলজিতে আলামতগুলো পাঠিয়েছেন। পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলেই প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন। এ জন্য তিন থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া ওই প্রতিবেদন সরাসরি বিচারিক কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় তাঁরা প্রতিবেদনের তথ্য আগেই বলতে পারেন না।

উচ্চ আদালত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন চেয়েছেন কি না, সেটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরের রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক সুবাস চন্দ্র বর্মণ জানেন না। আল আমিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মহানগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলমের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, তাঁকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।