তুচ্ছ ঘটনায় শরীয়তপুর ১০০ শয্যা সদর হাসপাতালের পাঁচ কর্মচারীকে এক রোগীর স্বজনেরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার প্রতিবাদে বেলা পৌনে ১১টা থেকে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন শারমিন নামের এক রোগী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রায়হান পাহাড় নামের এক তরুণ তাঁর ফাইল আনতে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নার্সদের কক্ষে যান। সেখানে দায়িত্বে থাকা নার্স নাসিমা আক্তার চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে রোগীর ফাইল নিতে বলেন। তখন রায়হান ৪ থেকে ৫ জন সহযোগী নিয়ে ওই নার্সের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। একপর্যায়ে তাঁকে মারতে উদ্ধত হন। তখন হাসপাতালের অন্য কর্মীরা এর প্রতিবাদ করেন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ওই ঘটনার ১৫ মিনিট পর রায়হান বেশ কিছু লোকজন নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার আবু হানিফ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুলাল ঢালী, বাবুর্চি খালেদ সিকদার, অফিস সহকারী জোবায়ের হোসেন ও ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুমার সরকারকে মারধর করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে যান তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান। হামলাকারীরা তাঁকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
মারধরের শিকার হওয়া কর্মচারীদের মধ্যে বাবুর্চি খালেদ সিকাদারের মাথায় আথাত লেগেছে। এই কারণে তাঁকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বেলা পৌনে ১১টা থেকে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরা সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেন। তখন জরুরি বিভাগের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বেলা একটার দিকে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম আবার শুরু হয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে জরুরি বিভাগ ছাড়া সব সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স নাসিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেডিসিন বিভাগের এক রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে রোগীর ফাইল নিতে আসেন এক তরুণ । তাঁকে শুধু বলেছি, এভাবে কোনো রোগীর ফাইল আমরা দিতে পারি না। ওই ফাইল রোগীর চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক নার্সদের কাছে থাকে। কারো বিশেষ প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে নিতে হয়। আমি ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে ফাইল নিতে বলেছিলাম। তখন তিনি আমার ওপর চড়াও হন ও আমাকে অপদস্থ করেন।’
হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুলাল ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের তলায় কাজ করছিলাম। এর মধ্যেই রায়হান পাহাড়ের সঙ্গে কয়েকজন লোক এসে জরুরি বিভাগে ও ফার্মাসিতে প্রবেশ করে আমাদের মারধর করেন। এখন ওদের ভয়ে আমরা কাজও করতে পারছি না। ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো কাজ করব না।’
অভিযুক্ত রায়হানের বাড়ি শরীয়তপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচরা এলাকায়। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধর করার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ তাঁর মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযুক্ত রায়হানের বাড়ি শরীয়তপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচরা এলাকায়। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধর করার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ তাঁর মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর স্বজনেরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা হামলা চালিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রায়হান নামের একজনকে চিনতে পেরেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অন্যদের শনাক্ত করা হবে। এই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের সব সেবা বন্ধ থাকবে।’
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর হামলার তথ্য পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এই বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁদের আটক করতে অভিযান চালানো হবে। চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’