চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ছাত্রলীগের একাংশের, কুশপুত্তলিকা দাহ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছের নেতৃত্বাধীন একটি পক্ষ। পাশাপাশি ছাত্রলীগ থেকে রেজাউলের বহিষ্কার চেয়ে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে পক্ষটি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে জানান, রেজাউল হক উপদপ্তর সম্পাদক রমজান হোসেনকে পরিকল্পনা করে কুপিয়েছেন। এ কোপে সে মারাও যেতে পারতেন। রেজাউলের মতো এমন বিতর্কিত ব্যক্তি কখনো ছাত্রলীগের পদে থাকতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ আরও জানান, ছাত্রলীগকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য তাঁদের এ কর্মসূচি। এ ছাড়া ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে রেজাউল মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। সেসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় রেজাউলকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে বলে তিনি জানান।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে সভাপতি রেজাউলের কণ্ঠসদৃশ একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এই ফোনালাপের জেরেই রেজাউলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিচ্ছেন তাঁর অনুসারীরা।

ফাঁস হওয়া ফোনালাপে সভাপতি রেজাউল হককে বলতে শোনা গেছে, ‘আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই ভয় পায়, তুই শুধু আমার পাশে থাক, বাকি কাজ অটো হয়ে যাবে, রমজানের কোপ পড়ছে না? অনেক লাফাইছে না। তো রমজান হিসেবে পড়ে গেছে না? আমাকে দাঁড়াতে দে, দেখবি অনেকে পায়ে এসে পড়বে। নয়তো নিজের মতো করে হিসেব মিলিয়ে নিবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হকের কুশপুত্তলিকা দাহ করে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ

কথোপকথনে উল্লেখিত রমজান হোসেন শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক ও রেজাউলের অনুসারী। ১ জুন ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় তাঁকে কুপিয়ে জখম করেছিলেন আরেক পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এ ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর থেকেই রেজাউলের অনুসারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রেজাউলও কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে নেই।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে শাহ আমানত হলে রেজাউল হকের কক্ষ ভাঙচুর করেছিলেন তাঁর নিজের অনুসারীরা। ওই হলের ৩১১ নম্বর কক্ষটি রেজাউল বছরের পর বছর অবৈধভাবে দখল করে থাকছিলেন।

তবে ফোনালাপ ফাঁসকে ‘সুপার এডিটেড’ বলে উল্লেখ করেন সভাপতি রেজাউল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাঁর মা-বাবা হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যাবেন। তিনি এ কারণে কয়েক দিন সংগঠনকে সময় দিতে পারেননি। যে ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, তা সুপার এডিটেড। বিভিন্নজনের সঙ্গে বলা কথা এডিট করে প্রচার করা হয়েছে।

আর মোহাম্মদ ইলিয়াছের নেতৃত্বাধীন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল হক বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এ চক্রটি শুরু থেকেই বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে আসছে। তিনি নিজের মতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন।

অবশ্য রেজাউলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফের দাবি, রেজাউলের হাতে এখন সংগঠন নিরাপদ নয়। নিজ অনুসারীকেই কোপানোর পেছনে তাঁর হাত রয়েছে বলে ফোনালাপ থেকে জানা যায়। এ ছাড়া সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তিনি বিভিন্ন সময় জড়িয়েছেন। রেজাউলকে বাদ দিয়ে শিগগিরই নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান খবির।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রাতে রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যর কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই কমিটির মেয়াদ ছিল এক বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর পর থেকে বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা কমিটি বাতিল চেয়ে অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

সভাপতি রেজাউল হকের বিরুদ্ধে বয়স শেষ হওয়ার পরও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে থাকা, ছাত্রত্ব না থাকার পরও বছরের পর বছর আবাসিক হলের কক্ষ দখল করে থাকাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত ২০ মার্চ রেজাউলের একটি ছবি আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। ছবিতে দেখা যায়, রেজাউল হলের কক্ষের বিছানায় শুয়ে মুঠোফোন দেখছেন। দুই পাশে বসে তাঁর পা টিপছেন শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা শামীম আজাদ ও শফিউল ইসলাম। রেজাউলের দাবি, তিনি অসুস্থ থাকায় দুই নেতা তাঁর ‘সেবা’ করছিলেন।