ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক গৃহবধূসহ দগ্ধ তিনজন। গতকাল শুক্রবার সকালে দাম্পত্য কলহের জেরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গওলা গ্রামে তিনজনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী অভিযুক্ত হাসান আলী পলাতাক।
দগ্ধ তিনজন হলেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০), শারমিনের চাচি শিরিন আক্তার (৫৫) ও চাচাতো ভাই রুবেল হোসেন (৩২)।
দগ্ধ শারমিন আক্তারের সঙ্গে হাসপাতালে আছেন তাঁর মামা মো. বাসু। আজ শনিবার সকালে তিনি বলেন, গতকাল দুপুরে তাঁর ভাগনিসহ অগ্নিদগ্ধ তিনজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর ভাগনির শরীরের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং রুবেলে শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ ঝলসে গেছে।
সাটুরিয়া থানার পুলিশ, ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে ধামরাইয়ের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর সঙ্গে সাটুরিয়া উপজেলার গওলা গ্রামের শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়। বর্তমানে এ দম্পতির ৮ বছরের একটি ছেলেসন্তান আছে। কয়েক বছর ধরে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। এ নিয়ে হাসান তাঁর স্ত্রী শারমিনকে মারধরও করতেন।
পারিবারিক কলহের জেরে গত সোমবার অভিমান করে ছেলেকে নিয়ে শারমিন গওলা গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান। গতকাল শুক্রবার সকালে হাসান শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে শারমিন পাশের চাচার বাড়িতে যান। হাসান আলী গতকাল সকাল ১০টার দিকে চাচাশ্বশুরের ঘরের ভেতর গিয়ে শারমিনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় শারমিনের চাচি শিরিন ও চাচাতো ভাই রুবেল তাঁকে রক্ষা করতে গেলে তাঁদের শরীরেও কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন তিনি। এতে শারমিন, শিরিন ও রুবেল দগ্ধ হন। পরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে তাঁদের তিনজনের শরীর আগুনে ঝলসে যায়।
খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্বজনেরা তাঁদের উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর দুপুরে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত হাসান পলাতক। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো বলেন, খবর পয়ে ওই বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরে কেরোসিন ঢেলে তিনজনের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।