কর্মিসভা ঘিরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ নেতা-কর্মী আহত

ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে এক পক্ষের অবস্থান। শুক্রবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মিসভাকে ঘিরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা সাড়ে চারটা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় ছাত্রলীগ–নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি হলের আবাসিক কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. এমাদুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পক্ষের সঙ্গে সহসভাপতি শরিফ হোসেন, সাব্বির মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন ও আকাশ ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন অনুষদীয় কর্মিসভা আয়োজনের নির্দেশনা ছিল। শুক্রবার কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আজ শুক্রবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুক্রবার বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে কৃষি ও অর্থনীতি ব্যবসায়ী শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের কর্মিসভা ডাকেন। এতে অপর পক্ষ কর্মিসভা শুরুর আগে বাধা দেয়। বেলা পৌনে তিনটার দিকে কর্মিসভা শুরু করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টার ও বাইরে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে দুপুর পৌনে চারটার দিকে সভাপতি আশিকুর রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন শাহপরান হলের বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার দুপুর থেকেই কর্মিসভা ঘিরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছিল।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আজ শুক্রবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

এ বিষয়ে সহসভাপতির শরিফ হোসেন বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুষদীয় কর্মিসভা ডেকেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি আংশিক হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে এবং হল কমিটি না করেই অনুষদীয় কমিটি ঘোষণা করে সাংগঠনিক ইউনিটের কাজ করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কর্মিসভাও করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তৃণমূল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের সঙ্গে ও সহসভাপতি-সাংগঠনিক সম্পাদকের পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিপক্ষে নই, তবে কেন্দ্র ঘোষিত সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার জন্য বারবার অনুরোধ করছি।’

আহত এক জনকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।আজ শুক্রবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ২০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হন মো. এমাদুল হোসেন। সে সময় কমিটি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি না হলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতাকে মানতে পারছেন না কিছু নেতা-কর্মী। এ নিয়ে কমটির মধ্যেই বিদ্রোহী একটি বলয় তৈরি হয়। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কেক কেটে উদ্‌যাপন করা হয়েছে। আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই বিরোধী পক্ষও কেক কেটে উদ্‌যাপন করেছে। এসব নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে এক পক্ষের অবস্থান। শুক্রবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে জানিয়ে প্রক্টর মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতা এখনো আমরা নিইনি।’
সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে। দুই পক্ষ ঢিল ছোড়াছুড়ি করছে। নেতাদের ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।