উচ্চ বেতনে চাকরির আশ্বাস দিয়ে বরিশালের ২৩ ব্যক্তিকে সৌদি আরবে পাচারের অভিযোগে রিক্রুটিং এজেন্সির পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সোহেল আহম্মেদ মামলাটি এজাহার হিসেবে রুজু করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। পাচার হওয়া এক যুবকের বাবা এরশাদ হাওলাদার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দড়িচর-খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার আসামিরা হলেন সৌদিপ্রবাসী ও ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার রিক্রুটিং এজেন্সি এসজে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরাফ হোসেন ওরফে সিফাত, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা সামসুল হক হাওলাদারের ছেলে বাবুল হাওলাদার ও কুদ্দুস হাওলাদার।
মামলার বরাত দিয়ে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা বলেন, বাদী এরশাদ হাওলাদারের ছেলে হাসানুজ্জামানসহ ২৩ যুবককে সৌদি আরবের সোলার প্যানেল তাজ আল নাওয়ার ট্রেডিং ইস্ট কোম্পানিতে মাসিক ১ হাজার ৮০০ রিয়াল বেতনে চাকরির প্রলোভন দেন আসামিরা। আসামিরা তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ করে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। পরে ৪ মে তাঁদের সৌদি আরবে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের সোলার প্যানেল কোম্পানিতে চাকরি না দিয়ে একটি হজ প্রকল্পে ১ মাস ১৫ দিন কাজ করানো হয়। তাঁদের ৬১৫ রিয়াল বেতন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ১২ জন সৌদি পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। পরে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বাকি ১১ জনের এখনো কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত রোববার অন্য এক যুবককে সৌদি আরবে পাচার করে হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে একই আদালতে আরেকটি মামলা হয়। রোববার বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা কুদ্দুস রাঢ়ি। ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোহেল আহম্মেদ বরিশালের কাজিরহাট থানার ওসিকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা নিশ্চিত করেন। মামলার বাদী কুদ্দুস রাঢ়ি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চুনারচর গ্রামের বাসিন্দা।
এ মামলার আসামিরা হলেন ঢাকা চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার এম আর ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা ও নরসিংদী বালুরচর মহল্লা আট পাইকা এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেনের ছেলে মো. রানা ও তাঁর মেয়ে হাবিবা আক্তার এবং গাজীপুরের কাপাসিয়া ফুলবাড়িয়া এলাকার মো. আব্দুল বাতেন শেখের ছেলে আবু তাহের শেখ।
মামলার বরাতে বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা বলেন, কুদ্দুস রাঢ়ির ছেলে মো. রুবেলকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য আবু তাহের শেখ প্রস্তাব দেন। চুক্তি অনুযায়ী রানা ও হাবিবাকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন রুবেল। ওই টাকা দেওয়ার পর ২০২৪ সালের ১৫ মে রুবেলকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর তাঁকে কোনো চাকরি দেওয়া হয়নি। পরে সৌদি আরবের মানব পাচার চক্রের কাছে দিয়ে দেওয়া হয় রুবেলকে। চক্রের সদস্যরা তাঁকে নির্যাতন করে হত্যার হুমকি দিয়ে কুদ্দুস রাঢ়ির কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। বিষয়টি বিবাদীদের জানালে তাঁরা বলেন, টাকা না দিলে রুবেলকে হত্যা করা হবে। তাই ছেলেকে ফিরে পেতে মামলা করেছেন বাবা।