মাদারীপুরে ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের জেরে দুই পরিবারের সংঘর্ষে আহত ১৫, আটক ৫

মাদারীপুরে দুই পরিবারের সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের জেরে দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার ছিলারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে আহত ১১ জনকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ছিলারচর এলাকার মহিবুল শিকদার (৩৫), মিজান শিকদার (১২), সেলিনা আক্তার (৩১), আজাহার শিকদার (৪০), সাহাবুদ্দিন শিকদার (৫০), তুমান ফকির (৩০), সুরাতন বেগম (৫০), রানু বেগম (৫০), রিনা বেগম (২৮), বাহাতুন বেগম (৫০) ও সদর উপজেলার কালিকাপুর এলাকার সালাউদ্দিন (৩২)। তাঁদের মধ্যে সুরাতন বেগমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন পশ্চিম ছিলারচর এলাকার তামিম শিকদার, সিরাজুল ইসলাম, দেলোয়ার শিকদার এবং কালিকাপুর এলাকার রাকিব উদ্দিন খান ও নুর হোসেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছিলারচর এলাকার নজরুল শিকদারের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন প্রতিবেশী সাহাবুদ্দিন শিকদারের ছেলে শাকিল। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিসও হয়। এর জেরে আজ সকাল ১০টার দিকে শাকিল লোকজন নিয়ে প্রথমে নজরুলের বাড়িতে ঢুকে হামলা করেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে নজরুল, তাঁর স্ত্রী, ভাইসহ পরিবারের চারজন আহত হন। এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় দেশি অস্ত্র নিয়ে দুই পরিবারের লোকজন সংঘর্ষে জড়ান। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ এবং আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সিহাব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষে আহত নারীসহ ১১ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সবার শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। বেশির ভাগের পিঠ, পা ও হাতে আঘাত। তাঁদের মধ্যে এক নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

ওই স্কুলছাত্রীর মা সেলিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়েটা ছোট। ওরে বিরক্ত করত শাকিল। তার বিরুদ্ধে নালিশ করায় দলবল নিয়ে আইসা আমাগো ঘরে ঢুইকা আমার স্বামী, দেবর, শাশুড়ি সবাইরে মারছে। আমাগো ছাড়াইতে যে গেছে, তাগোরেই কোপাইছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’ নজরুল শিকদার বলেন, ‘শাকিলরা আমাদের প্রতিবেশী। ওদের অতর্কিত হামলায় আমাদের পরিবারের সবাই আহত হয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

মাদারীপুরে সংঘর্ষে গুরুতর আহত এক নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের সামনে

অভিযোগের বিষয়ে শাকিলের মামা রাকিব উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাগনের বিরুদ্ধে যে উত্ত্যক্তের অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটি সত্য নয়। নজরুলের কাছে শাকিলের বাবা ৬ লাখ টাকা পাবেন। ওই পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে দুই পরিবারে দ্বন্দ্ব। এ জন্য দুই পরিবার মারামারি করছে। ঘটনা অন্যদিকে ঘোরাতে তাঁরা এখন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

ছিলারচর এলাকার বাসিন্দা হাজি খলিলুর রহমান বলেন, ‘দুই পরিবারই আত্মীয়। তাঁরা গুষ্টির চাচাতো ভাই। সামান্য বিষয় নিয়ে তারা এভাবে সংঘর্ষে জড়াবে মেনে নিতে পারছি না। যে সমস্যা নিয়ে সংঘর্ষ, সেটির সমাধানও আগেই হয়েছিল। কিন্তু এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। ওদের বিচার হওয়া উচিত।’ ছিলারচর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোতাহার খালাসী বলেন, তিনি হঠাৎ শুনতে পান যে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাঁরা এসে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই বংশের দুটি পরিবার সংঘর্ষে জড়ায়। পরে স্থানীয় লোকজনও তাদের পক্ষে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।