পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়ালের পলেস্তারা পুরোটা উঠিয়ে নতুন করে করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে নামমাত্র প্লাস্টার করা হয়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়ালের পলেস্তারা পুরোটা উঠিয়ে নতুন করে করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে নামমাত্র প্লাস্টার করা হয়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি

ভবন সংস্কারকাজে অনিয়ম

ভবনের খসে পড়া প্লাস্টারের পুরো অংশ উঠিয়ে ও মরিচা পড়া রড ঘষে পরিষ্কার করে প্লাস্টার দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

এক বছর আগে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবন নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদের বিষয় ছিল, সংস্কার না করায় হাসপাতালের পুরোনো ও চিকিৎসকদের আবাসিক ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছেন রোগী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সংবাদ প্রকাশের পর ভবনটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই সংস্কারকাজেও হচ্ছে গাফিলতি।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেন, ভবনের খসে পড়া প্লাস্টারের পুরো অংশ উঠিয়ে ও মরিচা পড়া রড ঘষে পরিষ্কার করে প্লাস্টার দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এতে কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেই ঢালাই খসে পড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলী বলেন, মরিচা পড়া রডের ওপর প্লাস্টার করে কোনো লাভ নেই, স্থায়িত্ব কম হবে; বরং এই আস্তর যেকোনো সময় খসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গত বছরের ২২ জুলাই প্রথম আলোয় ‘বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। 

জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরোনো ভবনে ডায়রিয়া ওয়ার্ড সংস্কারে ১০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা; পুরোনো ভবন সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও স্যানিটারি কাজের জন্য ৪৩ লাখ টাকা; চিকিৎসক কোয়ার্টার সংস্কারকাজে ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩১ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কোয়ার্টার সংস্কারকাজে ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চারটি প্রকল্পে মোট ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার সংস্কারকাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স বাবর অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৫০ দিন মেয়াদে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।

সূত্রটি আরও জানায়, দরপত্র অনুযায়ী পুরোনো এসব ভবনের টাইলস, জানালায় লোহার গ্রিল, কাঠের দরজা, জানালায় গ্লাস, স্যানিটারি কাজ, বৈদ্যুতিক লাইন, রংসহ তিনটি ভবনে ১৯০টি ক্যাটাগরিতে সংস্কারকাজ করতে হবে। ছাদ ও দেয়ালের খসে পড়া আস্তর উঠিয়ে নতুন করে এক হাজার বর্গমিটার প্লাস্টার করার কথা।

অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাদ ও দেয়ালের খসে পড়া ঢালাইয়ের আংশিক উঠিয়ে রডের মরিচা পরিষ্কার না করে খসে পড়া জায়গায় নামমাত্র প্লাস্টার করা হয়েছে। ঠিকাদার পুরোনো কিছু টাইলস উঠিয়ে নতুন কিছু টাইলস লাগিয়েছেন। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড, অফিস কক্ষ, বাসভবনের মেঝেতে নতুন টাইলস বসাতে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। ভবনগুলোর দরজা–জানালায় অপরিপক্ব গাছের কাঠ লাগানো হয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীরা বলেন, শৌচাগারগুলোতে লাগানো হয়েছে কম মূল্যের প্লাস্টিক দরজা। লোহার গ্রিল লাগানোর কথা থাকলেও গরিমসি করে ঠিকাদারের লোকজন। এ ছাড়া নতুন লাইট, ফোল্ডার, সকেট, তার, বোর্ড, সুইচ লাগানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কাজই করা হয়েছে পুরোনো জিনিসপত্র দিয়ে। তিনটি বৈদ্যুতিক পাখায় ব্যবহার করা হয়েছে একটিমাত্র রেগুলেটর।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, প্যাথলজি কক্ষের দরজার পাশের অংশে প্লাস্টার করার দুই দিনের মধ্যে সেই প্লাস্টার খসে পড়েছিল। আবার সেখানে প্লাস্টার করতে হয়েছে। সঠিকভাবে কাজ না হওয়ার কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। কাজও কেউ দেখতে আসেন না। তদারকি না থাকায় ঠিকাদার দরপত্র অনুযায়ী কাজ না করে তাঁর ইচ্ছেমতো কাজ করে যাচ্ছেন।

এসব অনিয়মের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মেসার্স বাবর অ্যাসোসিয়েটসের মালিক মো. মামুন বলেন, কাজটি তিনি করছেন না। পটুয়াখালীর হায়দার খান করছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি। আর সাব-ঠিকাদার হায়দার খান বলেন, ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দরপত্র অনুযায়ী সব কাজ হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী কাজ তদারক করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, কাজের অনিয়ম নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। 

এ বিষয়ে নির্মাণকাজ তদারক কর্মকর্তা ও উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আল ইমরান বলেন, কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। তবে দরপত্রের শিডিউল অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল গনি বলেন, অনিয়ম করার সুযোগ নেই। যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে নতুন করে কাজ করতে হবে।