টঙ্গীতে শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যার তদন্তে শিল্প পুলিশের বিশেষ কমিটি গঠন

শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলার অধিকতর তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদারকি কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা শিল্প পুলিশ। আজ শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম স্বাক্ষরিত একটি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা হয়। মামলার তদন্তে কমিটির প্রত্যেকে সদস্য এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন বলে জানা যায়।

শহিদুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় গত ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা হয়। ২৭ জুন মামলাটি হস্তান্তরের জন্য গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাছে আবেদন করে শিল্প পুলিশ। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটির দায়িত্ব পায় গাজীপুর শিল্প পুলিশ। এরপর গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার কয়েক দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন শিল্প পুলিশের সদস্যরা। এর মাঝেই আজ শনিবার সন্ধ্যায় মামলা তদন্তে গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি।

শিল্প পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইমরান আহম্মেদকে। সদস্যসচিব হিসেবে সহকারী পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসাইন এবং সদস্য করা হয়েছে পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কৌশিক আহমেদকে।

জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইমরান আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি বিভিন্ন কারণে অতিগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে মামলাটি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেই লক্ষে৵ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। মামলার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছি। আশা করছি খুব শিগগির একটি ফলাফল বের করতে পারব।’

শহিদুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি। গত ২৫ জুন টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায়ে কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার। এখন পর্যন্ত মামলার আসামি ধরা পড়েছেন মাত্র একজন।

মামলার বাদী কল্পনা আক্তারের অভিযোগ ছিল, মামলাটির তদন্ত নিয়ে গড়িমসি করছিল টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশ। মামলার এজাহার থেকে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়া, আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা না করাসহ পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ ছিল থানার ওসি শাহ আলমের বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি হস্তান্তর করা হয় শিল্প পুলিশের কাছে।

এ বিষয়ে কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ ইতিমধ্যে ১০–১২ দিন খেয়ে ফেলছে। এখন মামলা শিল্প পুলিশের কাছে গেছে। দু-একদিন না গেলে মামলার অগ্রগতি কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পুলিশের শক্তি আছে। আমার বিশ্বাস, তারা আসামিদের ধরতে পারবে।’

মামলাটি শিল্প পুলিশে হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পসংক্রান্ত যেকোনো বিরোধ বা মামলাগুলো শিল্প পুলিশ দেখে। এটা তাদের দেখার এখতিয়ার নেই। প্রাথমিকভাবে তাদের থানায় মামলা হয় বা তদন্ত করা হয়। এ ঘটনার পরপরই শিল্প পুলিশ তাদের কাছে মামলা হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেছিল। নিয়মানুযায়ী তাদের কাছে মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।