বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার নির্মিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ ও ‘স্বাধীন বাংলা’ ভাস্কর্য অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে
বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার নির্মিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ ও ‘স্বাধীন বাংলা’ ভাস্কর্য অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে

দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে পড়ে আছে বগুড়ায় নির্মিত ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ ও ‘স্বাধীন বাংলা’ ভাস্কর্য

বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার নির্মিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ ও ‘স্বাধীন বাংলা’ ভাস্কর্য এ বছরও মেরামত করা হয়নি। ২০০৬ সালে পৌর শহরের কর্মকার পাড়া মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছিল শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ এবং শহরের উত্তর সাহা পাড়ার শিশুপার্ক মোড়ে ২০১০ সালে নির্মিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভাস্কর্য ‘স্বাধীন বাংলা’।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিঘেরা এই দুটি স্তম্ভ দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। শেরপুর পৌর কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে এই দুটি স্তম্ভ রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এ স্তম্ভ দুটির মেরামতে এগিয়ে আসেনি।

আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মকার পাড়া মোড়ে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুরে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, তাঁদের লেখা নামগুলো মুছে গেছে। স্তম্ভটি ঘিরে যে আলোকসজ্জা ছিল, তা–ও আর নেই। এদিকে শহরের শিশুপার্ক মোড়ে স্থাপন করা ‘স্বাধীন বাংলা’ নামের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যটি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। ভাস্কর্যটি কিছু স্থানে ফেটে ও ভেঙে গেছে।

পথচারী লোকমান হোসেন ও সাইফুল ইসলাম বলেন, শেরপুরে যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন, তাঁদের নাম লিখে স্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছিল। শেরপুরের ইতিহাসে এই স্তম্ভের অনেক গুরুত্ব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ এর মেরামতে এগিয়ে না আসায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের লেখা নামগুলো সম্পূর্ণ মুছে গেছে। বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় লোকজন এই স্তম্ভের মেরামতের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার মৌখিকভাবে আবেদনও জানিয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এ বছরও মেরামত করা হয়নি।

শহরের উত্তর স্মৃতিস্তম্ভ মহল্লার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর শেরপুরে নির্মিত একমাত্র ভাস্কর্য এটি। পৌর কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে এই ভাস্কর্য স্থাপনের পর আর কোনো দিন এর মেরামতে এগিয়ে আসেনি। ভাস্কর্যটি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে, ফেটে ও ভেঙে গেছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এই ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। তারা দেখে যায়, তবু এর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয় না।

শেরপুর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ বলেন, গত অর্থবছরের কর্মকার পাড়ার স্মৃতিস্তম্ভটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়ে দরপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়মতো কাজ না করায় তা হয়নি। ‘স্বাধীন বাংলা’ ভাস্কর্যটির মেরামতে তাদের দপ্তর থেকে কোনো কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গ নিয়ে শেরপুর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত এই স্মৃতিস্তম্ভ ও ‘স্বাধীন বাংলা’ ভাস্কর্যের রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি প্রয়োজন। আগামী পৌর পরিষদের সভায় এই দুটি স্তম্ভ মেরামতের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।