ভৈরব নদে নৌযান চলাচল ও প্রবহমানতা সৃষ্টির জন্য সরকারি প্রকল্পের খননকাজ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। ২৭৯ কোটি ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের আওতায় যশোরের চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর থেকে সদর উপজেলার বসুন্দিয়া পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার নদ পুনঃখনন করা হয়েছে। এ ছাড়া বসুন্দিয়া থেকে আফ্রা ঘাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার নদ খনন করা হয়েছে। কিন্তু নদের মাঝখানে ঠিকমতো খননকাজ হয়নি। নদের ওপর নির্মিত ৫২টি অপরিকল্পিত সেতু আছে। ভৈরব নদের নৌ যোগাযোগ স্থাপন এবং জোয়ার-ভাটার প্রবাহ নির্বিঘ্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ভৈরব নদের বেশির ভাগ এলাকা এখন স্রোতহীন, প্রাণহীন। এসব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদের সঙ্গে।
২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খননে ভৈরব নদে প্রবাহ ফেরেনি। কেন?
ইকবাল কবির জাহিদ: আমরা যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে ভৈরব খননের জন্য আন্দোলন করে আসছি, সেটি হলো শতভাগ ‘নদী আইন’ অনুসরণ করে ভৈরব নদ খনন করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। বরং সম্পূর্ণ ‘নদী তট’ (ফোরশোর) আইন উপেক্ষা করে অর্থ লুটপাটের জন্য খননের কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রভাবশালীদের ক্ষমতা ও দুর্নীতি মিলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এ মেগা প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। এ ছাড়া নদের ওপরে থাকা অপরিকল্পিত ৫২টি সেতু সংস্কার করা হয়নি। এসব অনিয়ম–দুর্নীতির একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তাহলে কি ভৈরব খনন প্রকল্প ব্যর্থ হতে চলেছে?
ইকবাল কবির জাহিদ: খননের শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি, প্রবহমান ও নৌ চলাচল করার উপযোগী করে ভৈরব নদ খনন করতে হবে। এ ছাড়া নদের ওপরে থাকা অপরিকল্পিত ৫২টি সেতু নৌ চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করতে হবে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় মাথাভাঙ্গার সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ দিতে হবে। নদের প্লাবনভূমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু তা না করে যেনতেনভাবে নদের খননের কাজ শেষ করা হয়েছে। সেতুগুলো সম্প্রসারণ করা হয়নি। বর্তমানে যে কয়টি সেতু সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, সেগুলোও নদীসংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা মেনে করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু উচ্চ আদালতের সে নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভৈরব খনন প্রকল্প শুরু হয়েছিল, তার কোনোটাই পূরণ হয়নি। মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না।
তাহলে এখন আপনারা কী করবেন?
ইকবাল কবির জাহিদ: শহরের অংশে ভৈরব এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নদের তীরে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনার মেডিকেল বর্জ্য ও ভবনের শৌচাগারের মানববর্জ্য সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ভৈরব নদে ফেলা হচ্ছে। এতে নদের পানি কালো কুচকুচে হয়ে পড়েছে। পানি দুর্গন্ধযুক্ত। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, জেলা নদী রক্ষা কমিটি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা কারও কোনো গাত্রদাহ নেই। আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি। কর্মসূচি থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।