আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল পেছাল

‘গ্যাং কারে’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ পরিদর্শন করেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়ার শিবনগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল পিছিয়েছে। আজ মঙ্গলবার নতুন রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের কথা ছিল। সামান্য কাজ বাকি থাকায় সেটি পিছিয়ে এ মাসের শেষের দিকে হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল না করলেও আজ ‘গ্যাং কারে’ আখাউড়ার গঙ্গাসাগর থেকে শিবনগর পর্যন্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুই দেশের রেলপথ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ সময় রেলপথের বাংলাদেশ অংশে প্রায় পৌনে সাত কিলোমিটার ‘গ্যাং কার’ চালানো হয়। ‘গ্যাং কার’ নামে পরিচিত ‘ট্র্যাক কার’ বিশেষ আকৃতিতে নির্মিত রেলের ইঞ্জিন।

এর আগে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ডে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমবারের মতো ‘গ্যাং কার’ চালানো হয়েছিল। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চালাতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সম্ভাব্য উদ্বোধনের দিনকে সামনে রেখে রেলপথের বাকি কাজ এগিয়ে চলছে।

আজ ‍দুপুরে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ পরিদর্শনে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশনে যান প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতের নয়াদিল্লির টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রধান (কান্ট্রি হেড) শরৎ শর্মা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী ও আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আবু জাফর মিয়া। এ সময় তাঁরা ‘গ্যাং কারে’ গঙ্গাসাগর থেকে শিবনগর পর্যন্ত পরিদর্শন করেন।

আখাউড়া–আগরতলা রেলপথ প্রকল্প পরিদর্শনে কর্মকর্তা। মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়ার শিবনগর এলাকায়

শরৎ শর্মা বলেন, আখাউড়ার সম্পূর্ণ অংশে রেললাইন বসানো হয়েছে। বাকি কাজ শিগগিরই শেষ করা হবে। ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন চলাচলে আরও কিছু কাজ করতে হবে। ‘গ্যাং কারে’ আখাউড়া অংশের পুরো রেললাইন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আর কী কী কাজ বাকি, সেটা দেখা হয়েছে। দ্রুত এ রেলপথে মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে।

প্রকল্পের পরিচালক আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘আমরা ট্রায়াল দিতে আসিনি। কাজ দেখতে এসেছি। মূলত অ্যালাইমেন্ট ও ট্র্যাকের অবস্থা ঠিক আছে কি না, দেখতে শূন্যরেখায় এসেছি।’ তিনি বলেন, কাল রেল ভবনে রেলমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা হবে। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন বসানো হয়েছে। ফিটিংস লাগানো শেষ। এ মাসের শেষের দিকে রেল ইঞ্জিনে ট্রায়াল দিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত এ রেলপথ চালু হলে আগরতলা থেকে কলকাতা হয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটারের দূরত্ব কমে ৩৫০ কিলোমিটার হবে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় দেড় বছর। করোনাসহ নানা কারণে পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়।

আখাউড়া-আগরতলায় প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে সাড়ে ৬ কিলোমিটার ও আগরতলা অংশে ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশ বাস্তবায়নে ব্যয় প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। আগামী সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আখাউড়া-আগরতলার রেলপথ উদ্বোধনের কথা রয়েছে।